Recents in Beach

চন্দ্রগুপ্ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায় সহায়িকা সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর

চন্দ্রগুপ্ত 

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় 


 বিষয়সংক্ষেপ

সিন্ধু নদেরতটে সন্ধ্যাকালে শিবিরের সামনে সেকেন্দার, সেলুকস ও তাঁর কন্যা হেলেন দণ্ডায়মান। গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার বৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষের ভূ-প্রকৃতি, নদনদী, বনরাজির সৌন্দর্য ব্যাখ্যায় মগ্ন। প্রসঙ্গক্রমে এই সবকিছু ছাড়িয়ে এক সৌম্য, গৌর, দীর্ঘ-কান্তি জাতির গৌরবে প্রশংসায় রত, যারা দীর্ঘদিন এই দেশ শাসন করছে। তাদের মুখে শিশুর সারল্য, দেহে বজের শক্তি, চোখে সূর্যের দীপ্তি, বুকে ঝড়ের সাহস। যখন রাজা পুরুকে বন্দি করে তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন তাঁর প্রতি কীরূপ আচরণ প্রত্যাশিত পুরু উত্তর দেন—“রাজার প্রতি রাজার আচরণ !

মহান সম্রাট তাঁর বীরত্ব ও সাহসের পরিচয় পেয়ে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেন। ম্যাসিডনের যে বিজয়বাহিনী অর্ধেক এশিয়া জয় করেছে, সেই বীরবাহিনী এই ভারতবর্ষের শতদ্রুতীরে প্রথমবার বাধা পেল। সেনাপতি সেলুকসকে দিগবিজয় অসম্পূর্ণ রাখার কারণ হিসেবে সেকেন্দার জানান ‘সে দিগবিজয় সম্পূর্ণ করতে হলে নূতন গ্রিক সৈন্য চাই। ইতিমধ্যে সেনাধ্যক্ষ আন্টিগােনস গুপ্তচর সন্দেহে মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্তকে ধরে নিয়ে এলে সে জানায়, বহুদিন অবধি সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে প্রাপ্ত যুদ্ধবিদ্যা তিনি লিপিবদ্ধ করছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত তাঁর নিজের সিংহাসন পুনরুদ্ধার করার জন্য বৈমাত্রেয় ভাইয়ের অন্যায়ের প্রতিশােধ নিতে সে যুদ্ধ-কৌশল শিখছে।

বিশ্বাসঘাতক কে?—এই বিষয় নিয়ে সম্রাট সেকেন্দারের সামনেই সেলুকস ও আন্টিগােনস লড়াইয়ে লিপ্ত হলেন। আন্টিগােনসকে তাঁর অভব্য আচরণের জন্য নির্বাসিত করা হল। চন্দ্রগুপ্তের গুপ্তচর হয়ে প্রবেশ করার অপরাধে তাঁকে বন্দি করার কথা জানালে চন্দ্রগুপ্ত সম্রাট সেকেন্দারকে কাপুরুষ বলে বর্ণনা করেন এবং জানান, তাঁকে বধ না-করে বন্দি করতে পারবেন না। সম্রাট সেকেন্দার তাঁর বীরত্বের প্রশংসা করে তাঁকে হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার করার এবং দিগবিজয়ী হওয়ার ভবিষ্যদবাণী করেন। 

নামকরণ 

সাহিত্যে-শিল্প ক্ষেত্রে নামকরণের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। রচনার নামকরণের মাধ্যমে লেখক এক মুহূর্তেই পাঠকের মনে রচনাটির অন্তর্দেশের সংবাদ সম্পর্কে একটি ধারণা দেন। পাঠ্যের নাট্যাংশটি ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নামক মূল নাটকের একটি অংশমাত্র। মূল নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র চন্দ্রগুপ্ত। অন্তত নাটকের নামকরণে তারই ইঙ্গিত রয়েছে। নাটকের মূল বৃত্ত এবং সংযােজিত তিনটি উপবৃত্তই তা প্রমাণ করে। নাটকের প্রথম অংকের প্রথম দৃশ্যে চন্দ্রগুপ্তের শৌর্য, সাহসিকতা, উদ্যম সংকল্পের দৃঢ়তা অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্র হওয়ার যােগ্যতা দেখানাে হয়েছে। এ ছাড়া মূল নাটকের পাঁচটি অঙ্কের ছাব্বিশটি দৃশ্যের মধ্যেও চন্দ্রগুপ্তেরই প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং, কেন্দ্রীয় চরিত্রের নামানুসারে আলোচ্য নাটকের নামকরণ 'চন্দ্রগুপ্ত' অবশ্যই সংগত এবং সার্থক হয়েছে বলা যায়।

হাতে কলমে 

১.১ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য কোথায় গিয়েছিলেন ?

উঃ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য বিলেতে গিয়েছিলেন। 

১.২ তাঁর রচিত দুটি নাটকের নাম লেখো। 

উঃ তাঁর রচিত দুটি নাটকের নাম হল - 'সাজাহান' ও 'চন্দ্রগুপ্ত'

২ নীচের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর একটি বাক্যে লেখাে :

২.১ নাট্যাংশটির ঘটনাস্থল ও সময় নির্দেশ করাে। 

উঃ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশটির ঘটনাস্থল হল সিন্ধু নদীর তীরে অবস্থিত শিবিরের সম্মুখভাগ এবং সময় হল সন্ধ্যাকাল। 

২.২ নাট্যাংশে উল্লিখিত ‘হেলেন’ চরিত্রের পরিচয় দাও। 

উঃ  দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ শীর্ষক নাট্যাংশে উল্লেখিত হেলেন হলেন ঐতিহাসিক চরিত্র সেলুকসএর কন্যা। হেলেনের সঙ্গে পরবর্তীকালে মৌর্যবংশের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্তের বিবাহ হয়েছিল। 

২.৩ ‘রাজার প্রতি রাজার আচরণ!-উদ্ধৃতাংশের বক্তা কে ? 

উঃ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হল রাজা পুরু। 

২.৪ “জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চাই”—বক্তা কীভাবে এই কীর্তি রেখে যেতে চান ? । 

উঃ আলােচ্য উক্তিটির বক্তা ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের অধিপতি সেকেন্দার। তিনি বিচিত্র দেশ ভারতবর্ষের সৌম্য, গৌর, দীর্ঘকান্তি জাতির বৈচিত্র্যময় শৌর্যকে তাঁর মহানুভবতা, ক্ষমাধর্মের দ্বারা জয় করে একটি অক্ষয়কীর্তি রেখে যেতে চান। 

২.৫. ‘সম্রাট, আমায় বধ না করে বন্দি করতে পারবেন না। বক্তাকে বন্দি করার প্রসঙ্গ এসেছে কেন ?

উঃ  গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার, যিনি সেকেন্দার হিসেবে পরিচিত, তাঁর শিবিরে শত্রুর গুপ্তচর হয়ে প্রবেশ করেছে। উদ্ধৃতাংশটির বক্তা চন্দ্রগুপ্ত। এই অপরাধে বক্তাকে বন্দি করার প্রসঙ্গটি এসেছে।

৩ নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও : 

৩.১ 'কী বিচিত্র এই দেশ!’-বক্তার চোখে এই দেশের বৈচিত্র্য কীভাবে ধরা পড়েছে ?

উঃ  প্রখ্যাত নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত নাটকের আলােচ্য উক্তিতে বক্তা সেকেন্দার ‘বিচিত্র দেশ’ ভারতবর্ষের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ ও বিস্মিত। দিনে প্রচণ্ড সূর্য গাঢ় নীল আকাশকে দগ্ধ করে, আবার রাত্রে শুভ্র চাঁদ তার সমস্ত দগ্ধ জ্বালা নিবারণ করে স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায় স্নান করিয়ে দেয়। অন্ধকার রাতে অগণ্য উজ্জ্বল জ্যোতিঃপুঞ্জে যখন আকাশ ঝলমল করে, তখন তিনি অবাক বিস্ময়ে তা দেখতে থাকেন। বর্ষাকালে ঘন-কালাে মেঘ গুরুগম্ভীর গর্জনে প্রকাণ্ড দৈত্যসেনার মতাে সমস্ত আকাশ ঢেকে দিলে তিনি নিশ্ৰুপ হয়ে তার সেই ভীষণ রূপ প্রত্যক্ষ করেন। এই দেশের বিশাল নদ- -নদী ফেনিল উচ্ছ্বাসে, উদ্দাম বেগে বয়ে চলেছে। এর মরুভূমি স্বেচ্ছাচারের মতাে তপ্ত বালুরাশি নিয়ে খেলা করছে। এইভাবে তিনি এ দেশের বৈচিত্র্যময় অপরূপ সৌন্দর্য দেখে বিস্মিত ও আনন্দ লাভ করেন। 

৩.২ 'ভাবলাম—এ একটা জাতি বটে।'-- বক্তা কে ? তাঁর এমন ভাবনার কারণ কী ?

উঃ
প্রশ্নোধৃত উক্তিটির বক্তা হলেন গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার । 

» পরাজিত রাজা পুরুর নির্ভীক, নিষ্কল্প উচ্চারণ সেকেন্দারের মনে ভারতীয় রাজাদের প্রতি সমবােধ জাগায়। তিনি তাঁর স্বাধীনচেতা, সাহসী মানসিকতা দেখে শ্রদ্ধাবনত হন। উপলব্ধি করেন, এমন বীরদের বেশিদিন পদানত করে রাখা যাবে না। বরং এমন মানসিকতাকে সম্মান জানানােই বিচক্ষণতার কাজ। রাজা পুরুর আচরণ, মানসিকতা, সাহস ইত্যাদি সম্রাট সেকেন্দারকে অত্যন্ত আকৃষ্ট করায় তাঁর প্রতি যথাযােগ্য সম্মান দেখাতেই সেনাপতি সেলুকসকে আলােচ্য কথাটি বলেছেন। 

৩.৩ 'এ দিগবিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাচ্ছেন কেন সম্রাট ?'—এ প্রশ্নের উত্তরে সম্রাট কী জানালেন ? 

উঃ  সেলুকসের প্রশ্নের উত্তরে সম্রাট সেকেন্দার জানালেন, ভারতবর্ষের মতাে বিশাল, বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময় দেশে ‘শৌখিন দিগবিজয়’ সম্পূর্ণ করতে হলে প্রয়ােজন নতুন গ্রিক সৈন্যের। সুদূর ম্যাসিডন থেকে বহু রাজ্য, জনপদ তারা পদতলে দলিত করে এসেছে। ঝড়ের মতাে মহাশত্রু সৈন্যদলকেও তারা ধূমরাশির মতাে উড়িয়ে দিয়েছে। নিয়তির মতাে অপ্রতিরােধ্য, হত্যার মতাে ভয়ংকর, দুর্ভিক্ষের মতাে নিষ্ঠুর সম্রাট সেকেন্দার তাঁর গ্রিক সৈন্য নিয়ে অর্ধেক এশিয়ায় তাঁর বিজয়পতাকা উড়িয়ে রাখলেও শতদ্রতীরে প্রথম তাঁর বিজয়রথ বাধাপ্রাপ্ত হল। | 

৩.৪ 'ভারতবাসী মিথ্যা কথা বলতে এখনও শিখে নাই।'---বক্তা কে ?কোন্ সত্য সে উচ্চারণ করেছে ? 

উঃ আলােচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন মগধের রাজ্যচ্যুত রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত। 

» গ্রিক সেনা আন্টিগােনাস চন্দ্রগুপ্তকে যখন আটক করে সেকেন্দারের কাছে নিয়ে যায়, তখন সেকেন্দার তাঁর অভিপ্রায় ও পরিচয় জানতে চাইলে, চন্দ্রগুপ্ত অকপটে সত্য জানান যে, তিনি মগধরাজ মহাপদ্মের পুত্র। তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ সিংহাসন অধিকার করে তাঁকে নির্বাসিত করে। তিনি এর প্রতিশােধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে যুদ্ধের কৌশল আয়ত্ত করার চেষ্টায়
ছিলেন। এজন্য তিনি এক শিবিরের পাশে বসে নির্জন শুকনাে তালপাতার ওপরে সম্রাট সেকেন্দারের বাহির চালনা, ব্যুহ রচনা প্রণালী, সামরিক নিয়ম—যা তিনি মাসাধিক কাল ধরে সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে শিখেছিলেন—সেগুলি লিখে নিচ্ছিলেন। 

৩.৫, আমার ইচ্ছা হলাে যে দেখে আসি...'—বক্তার মন কোন্ ইচ্ছে জেগে উঠেছিল ? তার পরিণতিই কী হয়েছিল ? 

উঃ উক্তিটির বক্তা মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত। তিনি ম্যাসিডন অধিপতির অদ্ভুত বিজয়বার্তা শুনেছিলেন তিনি অর্ধেক এশিয়া পদতলে দলিত করে ভারতবরে এসেছেন। আর্যকুলশ্রেষ্ঠ পুরুকে পরাজিত করেছেন বক্তা চন্দ্রগুপ্ত সেই পরাক্রম, সেই লুকোনাে শক্তিকে প্রত্যক্ষ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, যার সংঘাতে আর্যের মহীবীর্যও বিচলিত হয়েছে। আসলে বক্ত৷ চন্দ্রগুপ্তের ইচ্ছে, তিনি তাঁর হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার করবেন। সম্রাট সেকেন্দারের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের আলাপবিনিময়ের ইচ্ছাপ্রকাশ তাঁর অদম্য জ্ঞানতৃষার প্রকাশক 

» সেই কারণে তিনি ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের সেনাপতি সেলুকাসের কাছে যুদ্ধবিদ্যা ও কৌশলশিক্ষা অর্জন করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি তাঁর অর্জিত সামরিক শিক্ষার মাধ্যমে তাঁর হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই চন্দ্রগুপ্তই মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নন্দ বংশের প্রতিপত্তি খর্ব করে মগধে মৌর্য বংশের ভিত্তি স্থাপন করেন। আলােচ্য প্রসঙ্গে সেই অনিবার্য ঐতিহাসিক পরিণতির সংকেতসূত্র তুলে ধরা হয়েছে। 

৪ নীচের উদ্ধৃত অংশগুলির প্রসঙ্গ ও তাৎপর্য আলােচনা করাে :

৪.১ 'এ শৌর্য পরাজয় করে আনন্দ আছে।'

উৎস : দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ শীর্ষক নাট্যাংশ থেকে উদ্ধৃত পঙক্তিটির বক্তা ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের অধিপতি সেকেন্দার। ) 

প্রসঙ্গ : সম্রাট সেকেন্দার ভারতবর্ষের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির রূপ, বনরাজি, পর্বতশ্রেণির সৌন্দর্য বর্ণনার পর এখানকার দীর্ঘ-কান্তি, সাহসী জাতির প্রশংসা প্রসঙ্গে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন। 

তাৎপর্য : সুবিশাল ম্যাসিডনের সম্রাট সেকেন্দার বিভিন্ন রাজ্য, জনপদ জয় করেছেন। অর্ধেক এশিয়া তাঁর পদানত। প্রকৃত সম্রাটের মতাে তিনিও একটি বীর, সাহসী জাতিকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে আত্মমর্যাদা ও আত্মগৌরব বােধ করেন। যে-জাতির মুখে শিশুর সরলতা, দেহে বজের শক্তি, চক্ষে সূর্যের দীপ্তি, বুকে অসীম সাহস, সেই জাতিকে পরাজিত করলেই প্রকৃত বীরত্বের প্রকাশ, প্রকৃত আনন্দ আস্বাদন করা যায় বলে তিনি মনে করেন। 

৪.২ 'সম্রাট মহানুভব।'

উৎস :
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটক থেকে সংকলিত আলােচ্য উক্তিটির বকা সেনাপতি সেলুকস। 

প্রসঙ্গ: বিজিত ভারতবর্ষীয় রাজা পুরুর দুর্জয় সাহস ও বলিষ্ঠ আত্মপ্রত্যয়ের পরিচয় পেয়ে সম্রাট সেকেন্দারের তাঁকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গেই উপরিউক্ত উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে। 

তাৎপর্য: বিজয়ী সম্রাট যদি বিজিত সম্রাটকে উপযুক্ত মর্যাদা, যথাযােগ্য সম্মান প্রদর্শন করেন এবং মানবিকতা ও সহমর্মিতার নিদর্শনস্বরূপ তাঁকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেন, তাহলে জগৎব্যাপী তাঁর এই অক্ষয়কীর্তি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। ম্যাসিডনের সম্রাট সেকেন্দারও পুরুকে রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে তাঁর সেই মহানুভবতার পরিচয় রেখেছেন, এবং তাঁর অক্ষয়কীর্তিকে অমর করে রেখেছেন। সম্রাট সেকেন্দারের উদারতা, সত্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা ও মানবিকবােধ ইত্যাদি গুণের জন্য তাঁকে যথার্থ মহানুভব বলা যায় । 

৪.৩ ‘বাধা পেলাম প্রথম—সেই শতদ্রুতীরে।'

উৎস: আলােচ্য উদ্ধৃতাংশটি নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে সংকলিত হয়েছে। 

প্রসঙ্গ : সম্রাট সেকেন্দার গ্রিক সৈন্যের বীরত্ব তথা পৃথিবীব্যাপী তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তারের কাহিনি প্রসঙ্গে প্রশ্নোপ্ত মন্তব্যটি করেছেন। 

তাৎপর্য : গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার বেরিয়েছিলেন শৌখিন দিগবিজয়ে। তাঁর ইচ্ছা, জগতে একটি কীর্তি রেখে যাওয়ার। সেই উদ্দেশে তিনি একের-পর-এক দেশ জয় করে চলেছিলেন। সুদূর ম্যাসিডন থেকে বহু রাজ্য, জনপদকে তিনি ঘাসের মতাে পায়ে মাড়িয়ে, ধুলাের মতাে উড়িয়ে দিয়ে অর্ধেক এশিয়াকে পদানত করে অবশেষে তাঁর দিগবিজয়ের পথে প্রথম বাধা পেলেন শতদ্রু নদীর তীরে এসে। উক্তিটির মধ্যে দিয়ে বক্তার বিজয়বাসনার উচ্চাশার পরিচয় পাওয়া যায়। 

৪.৪ ‘আমি তারই প্রতিশােধ নিতে বেরিয়েছি।'

উৎস: আলােচ্য উক্তিটি নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। উক্তিটির বক্তা হলেন রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত। 

প্রসঙ্গ : সম্রাট সেকেন্দার চন্দ্রগুপ্তের কাছে গ্রিক সৈন্যদের সামরিক কৌশল ও যুদ্ধবিগ্রহের নীতি শেখার কারণ জানতে চাইলে, মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা জানানাের প্রসঙ্গে প্রশ্নালােচিত মন্তব্যটির অবতারণা করেছেন। 

তাৎপর্য : চন্দ্রগুপ্তকে তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ সিংহাসনচ্যুত করে নির্বাসিত করেছে। তাই হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার করার জন্যই চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে গােপনে এবং তাঁর অজান্তেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এটিই তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। 

৪.৫ 'যাও বীর ! মুক্ত তুমি।'

উৎস :
আলােচ্য উক্তিটি প্রখ্যাত নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। উক্তিটির বক্তা হলেন— সম্রাট সেকেন্দার । 

প্রসঙ্গ : গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্তের বীরত্ব, সাহস ও শৌর্যের পরিচয় পেয়েছেন। তাই তাঁর প্রশংসায় এবং তাঁর সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করার প্রসঙ্গে আলােচ্য উক্তিটি করেছেন। 

তাৎপর্য : মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত তাঁর সৎ ভাইয়ের দ্বারা সিংহাসনচ্যুত হয়ে নির্বাসিত হন। তখন তিনি তার প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য গােপনে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। অতঃপর তিনি শােনেন, গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার-এর অদ্ভুত বিজয়বার্তা। তাই তিনি গােপনে এসে গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে সম্রাটের বাহিনী পরিচালনা, সেনা সাজানাে পদ্ধতি, সামরিক নিয়ম সবকিছু শিখছিলেন এবং তালপাতায় তা লিখে নিচ্ছিলেন। এই অবস্থায় তিনি ধরা পড়ে যান এবং গ্রিক সম্রাটের কাছে তিনি অকপটে তাঁর অপরাধ স্বীকার করেন। তিনি জানান, শুধুমাত্র হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার করাই তাঁর উদ্দেশ্য, অন্য কোনাে অভিসন্ধি তাঁর নেই। এই কথা শুনে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার খুশি হয়ে তাঁর সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যদ্বাণী করে তাঁকে মুক্ত করে দেন।

৫ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে : 

৫.১ নাট্যাংশটি অবলম্বনে ঐতিহাসিক নাটকের পরিবেশ সৃষ্টিতে নাটককারের দক্ষতার পরিচয় দাও।

উঃ  নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ শীর্ষক নাট্যাংশে নাটককার চরিত্রচিত্রণ, ঘটনার বিন্যাস, মঞ্চসজ্জা, পরিচ্ছদ কল্পনা ও পরিবেশের যথাযথ পরিস্ফুটনে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আলােচ্য নাটকে ঐতিহাসিক চরিত্র সেকেন্দার, সেলুকস, চন্দ্রগুপ্ত, হেলেন প্রমুখের চরিত্র পরিস্ফুটনে নাটককার
ইতিহাসের কাহিনিকে যথাযথ অনুসরণ করেছেন। ঐতিহাসিক নাটকের চরিত্র ও ঘটনা ইতিহাসকে যেন ছাপিয়ে না-যায়, তার প্রতিও তিনি সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। আলােচ্য নাটকে সেকেন্দারের জবানিতে ‘সত্য সেলুকস! কী বিচিত্র এই দেশ! এবং ভারতবর্ষীয় রাজা পুরুর সঙ্গে গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডারের যুদ্ধের যে-বর্ণনা লেখক দিয়েছেন, তা-ও ইতিহাস অনুসারী বলা যায়। সেই দিক থেকে ঐতিহাসিক নাটকের পরিবেশ সৃষ্টিতে আলােচ্য নাট্যাংশে লেখক তাঁর দক্ষতার নিদর্শন দিয়েছেন।

    মঞসজ্জার বিষয়েও নাটককার যথাযথ নির্দেশ দিয়েছেন। আলােচ্য নাট্যাংশে মসজ্জা ও নির্দেশনা বিষয়ে নাটককার স্থান হিসেবে সিন্ধু নদীতট, দূরের গ্রিক জাহাজশ্রেণি এবং কাল হিসেবে সন্ধ্যা নির্দেশ করেছেন। নদীতটে শিবির-সম্মুখে সেকেন্দার ও সেলুকস অস্তগামী সূর্যের দিকে চেয়েছিলেন। হেলেন সেলুকসের হাত ধরে তাঁর পার্শ্বে দণ্ডায়মান। সূর্যরশ্মি তাঁর মুখের ওপর এসে পড়েছিল। এখানে নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ইতিহাসকে অক্ষুন্ন রেখে নাটকের পরিবেশ সৃষ্টিতে তাঁর কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। স্থান, কাল, নাটকের প্রেক্ষিত রচনাতেও তিনি তাঁর কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন। সম্রাট সেকেন্দার যে ভারতবর্ষীয় রাজা পুরুর কাছে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং যুদ্ধজয়ের পরেও তিনি তাঁর রাজত্ব প্রত্যর্পণ করেন—সবকিছুতেই ইতিহাস রক্ষিত হয়েছে বলা যায় এবং এখানেই নাটককারের কৃতিত্ব। 

৫.২ নাট্যাংশে সেকেন্দার’ ও ‘সেলুকস’-এর পরিচয় দাও। সেকেন্দারের সংলাপে ভারত-প্রকৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ কীভাবে ধরা দিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করাে। 

উঃ সেকেন্দার : নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত নাট্যাংশের প্রধান চরিত্র হল সেকেন্দার। তিনি ম্যাসিডনিয়ার সম্রাট। তিনি জগতে অক্ষয় কীর্তিস্থাপনের উদ্দেশ্যে দিগবিজয় করতে বের হয়েছেন। তিনি ছিলেন এক মহানুভব সম্রাট। তাই ভারতবর্ষীয় সম্রাট পুরুর দৃঢ়চেতা মনের পরিচয় পেয়ে তিনি তাঁকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছেন। সৈন্যাধ্যক্ষ তাঁর সামনেই স্পর্ধিত মনােভাব দেখালে, তাঁকে নির্বাসিত করেছেন। আবার গুপ্তচর সন্দেহে ধরে আনা চন্দ্রগুপ্তের বীরত্বে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। 

সেলুকস : দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হল সেলুকস। তিনি গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের সেনাপতি ও একান্ত অনুগত ছিলেন। সম্রাট পুরুকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দিলে তিনি তা সম্রাটের মহত্ত্ব হিসেবেই দেখেছেন। তাঁর আত্ব মর্যাদাবােধ ছিল প্রখর। তাই আন্টিগােনস তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বললে তিনি তাঁকে শাস্তি দিতে তরবারি বার করেছিলেন। 

 প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য : গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার দিগবিজয়ে এসে ভারত প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় রূপ দেখে বিস্মিত হয়েছেন। দিনে প্রখর সূর্যকিরণ আকাশকে পুড়িয়ে দেয়, আবার রাতের শুভ্র চন্দ্রিমা তাকে ম্লান করে দেয় । অমাবস্যার রাতে অসংখ্য জ্যোতিঃপুঞ্জে আকাশকে ঝলমল করতে দেখে সম্রাট বিস্মিত হন। গুরুগম্ভীর গর্জনে প্রকাণ্ড দৈত্যসৈন্যের মতাে ঘন কৃয় মেঘ। আকাশ ঢেকে দেয়। ভারতবর্ষের উত্তরে যে অভ্রভেদী তুষারাবৃত হিমাদ্রি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যে নদনদী ফেনিল উদ্দামে ছােটাছুটি করছে এবং যে মরুভূমি তপ্ত বালুকারাশি নিয়ে একলা রয়েছে, তা তিনি বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখেন। কোথাও তালবন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও বা বটবৃক্ষ থেকে স্নেহছায়া ঝরে পড়ছে। 

৫.৩ 'চমকিত হলাম।'—কার কথায় বক্তা চমকিত হয়েছিলেন? তাঁর চমকিত হওয়ার কারণ কী? 

উঃ  নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ শীর্ষক নাট্যাংশের উদ্ধৃত প্রশ্নাংশে ভারতবর্ষের ‘আর্যকুলরবি’ পুরুর কথায় বক্তা গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার চমকিত হয়েছিলেন। » বিজিত সম্রাট পুরুকে বন্দি করে আনার পর বিজয়ী সম্রাট সেকেন্দার তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, তিনি গ্রিক বীরের কাছে কেমন আচরণ প্রত্যাশা করেন। সম্রাট পুরু জানিয়েছিলেন—“রাজার প্রতি রাজার আচরণ’-ই তাঁর কাছে প্রত্যাশিত। এই প্রত্যুত্তরে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার বিস্মিত হন। আসলে পুরুর জাতীয়তাবােধ, বীরত্ব ও সাহসের পরিচয় পেয়ে , তিনি আপ্লুত হয়েছিলেন। 

৫.৪ ;সম্রাট মহানুভব।'---বক্তা কে ?সম্রাটের মহানুভবতা'-র কীরূপ পরিচয় নাট্যাংশে পাওয়া যায় ? 

উঃ ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকের প্রশ্নোক্ত উক্তিটির বক্তা হলেন গ্রিক সেনাপতি সেলুকস। প্রকৃত মহানুভব ব্যক্তি সে-ই, যে অপর ব্যক্তিকে তাঁর প্রাপ্য প্রকৃত সম্মান, শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারেন। আলােচ্য নাট্যাংশে দেখা গিয়েছে, ম্যাসিডনিয়া সাম্রাজ্যের অধিপতি সম্রাট সেকেন্দার ভারতবর্ষীয় রাজা পুরুকে বন্দি করেও তাঁর রাজ্য প্রত্যর্পণ করেন, যা তাঁর মহানুভবতার পরিচয় বহন করে। আবার মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্তকে সম্রাট সেকেন্দারের সামনে আনার পর গ্রিক ব্যুহ রচনা প্রণালী, সামরিক শিক্ষা প্রভৃতি গােপনে শিখেছে জেনে তিনি তাঁকে বন্দি করতে পারতেন। কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত তাঁর বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ওপর প্রতিশােধ নেবে জেনে এবং আন্টিগােনসের সঙ্গে যুদ্ধে তাঁর বীরত্বের ও সত্যবাদিতার পরিচয় পেয়ে তিনি তাঁকে নির্ভয়ে চলে যেতে বলেন, যা সম্রাট সেকেন্দারের মহানুভবতার এক অপূর্ব নিদর্শন। 

৫.৫ ইতিহাসের নানান অনুষঙ্গ কীভাবে নাট্যকলেবরে বিধৃত রয়েছে তা ঘটনাধারা বিশ্লেষণ করে আলােচনা করো। 

উঃ  নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকটি ভারতীয় ইতিহাসের উপাদানকে ভিত্তি করেও সাহিত্যের রসে জারিত করে প্রকাশ করেছেন। আলােচ্য নাট্যাংশের কাহিনির প্রেক্ষাপটকে, ঘটনার ধারাগুলিকে সাহিত্যের আঙিনায় এনে নাট্যকলেবর দান করলেও তিনি কোথাও এসে ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহকে ক্ষুন্ন করেননি। নাট্যাংশের চরিত্রগুলি সকলের ঐতিহাসিক চরিত্র যদি বিশ্লেষণ করা হয়, দেখা যাবে, ম্যাসিডনিয়া সাম্রাজ্যের অধীশ্বর আলেকজান্ডার, তাঁর সেনাপতি সেলুকসের সঙ্গে ভারতে এসেছিলেন সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য এবং তাঁরা আর্যকুলরবি পুরুর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হন—এই ইতিহাস প্রসঙ্গটি আলােচ্য নাট্যাংশে সম্রাট সেকেন্দারের জবানিতে ব্যক্ত হয়েছে। আবার ইতিহাসসমর্থিত হিদাম্পিসের যুদ্ধে ভারতীয় রাজা পুরুকে তিনি যে রাজত্ব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, সেই ইতিহাস প্রসঙ্গটিও এখানে বর্ণিত হয়েছে। মগধের রাজপুত্র যে তাঁর বৈমাত্রেয় ভাইয়ের দ্বারা প্রতারিত হয়েছিলেন এবং সিংহাসনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন এবং নন্দবংশের পতনের পর যে মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় সেই ইতিহাস প্রসঙ্গটিও আলােচ্য ‘চন্দ্রগুপ্ত’ শীর্ষক নাট্যাংশে নাটককার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিস্ফুট করেছেন। সব মিলিয়েই ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকটি হল একটি ঐতিহাসিক নাটক। 

৫.৬। 'গুপ্তচর।'-- কাকে ‘গুপ্তচর’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে ? সে কি প্রকৃতই গুপ্তচর ? 

উঃ নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ শীর্ষক নাট্যাংশে চন্দ্রগুপ্তকে ‘গুপ্তচর’ অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

 » মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্তের বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ সিংহাসন অধিকার করে চন্দ্রগুপ্তকে নির্বাসিত করেছেন। সেই প্রতিশােধ নেওয়ার জন্যই চন্দ্রগুপ্ত সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে গ্রিক সামরিক শিক্ষা অর্জন করেছিল। কিন্তু তাঁর মধ্যে সম্রাট সেকেন্দারের সঙ্গে যুদ্ধ করার কোনাে অভিসন্ধি ছিল না। এমনকি সেকেন্দারের কোনাে ক্ষতি হােক, তাও তাঁর কাম্য ছিল না। সেইজন্য চন্দ্রগুপ্তকে ‘গুপ্তচর’ আখ্যা দেওয়া যায় না। 

৫.৭ ‘সেকেন্দার একবার সেলুকসের প্রতি চাহিলেন, ..—তাঁর এই ক্ষণেক দৃষ্টিপাতের কারণ কী ? 

উঃ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে দিগবিজয় নিয়ে কথােপকথনরত সম্রাট সেকেন্দার এবং তাঁর সেনাপতি সেলুকসের কাছে সৈন্যাধ্যক্ষ আন্টিগােনস গুপ্তচর সন্দেহে চন্দ্রগুপ্তকে ধরে আনেন। চন্দ্রগুপ্ত সেলুকসের কাছে গ্রিক যুদ্ধ প্রণালী কিছু শিখেছিলেন এবং তা একটি পত্রে লিখে নিচ্ছিলেন। কিন্তু চন্দ্রগুপ্তের লেখা পত্র আন্টিগােনস পাঠ করতে না পেরে তাঁকে সম্রাটের কাছে নিয়ে আসে। সম্রাট সেকেন্দার যখন চন্দ্রগুপ্তকে বলেন, “কী লিখছিলে যুবক? সত্য বলাে। তার উত্তরে চন্দ্রগুপ্ত জানান, সত্য বলব। রাজাধিরাজ ভারতবাসী মিথ্যা কথা বলতে এখনও শিখে নাই। এই উত্তরে অবাক হয়ে সেকেন্দার সেলুকসের প্রতি চেয়েছিলেন। যদিও সেলুকস তাঁকে নিতান্তই সাধারণ যুবক ভেবে যুদ্ধরীতি আলােচনা করতেন বলে জানান। 

৫.৮ চন্দ্রগুপ্ত-সেলুকসের কীরূপ সম্বন্ধের পরিচয় নাট্যাংশে মেলে ? 

উঃ  নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় সৃষ্ট ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকে চন্দ্রগুপ্ত তাঁর বৈমাত্রেয় ভ্রাতা কর্তৃক হৃত সিংহাসন পুনরুদ্ধার করার জন্য ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের অধিপতি সেকেন্দারের সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে বাহিনী চালনা, ব্যুহ রচনা-প্রণালী, সামরিক নিয়ম প্রভৃতি অনেকদিন ধরে শিখেছিলেন। সুতরাং, সেনাপতি সেলুকস চন্দ্রগুপ্তের সামরিক শিক্ষার গুরু বলা যায়। আলােচ্য নাট্যাংশে এই সম্বন্ধের অর্থাৎ, গুরু-শিষ্যের সম্পর্কের পরিচয় পাওয়া যায়। 

৫.৯ তা এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম।’-কার উক্তি ? সে কী লিখে নিচ্ছিল ? তাঁর এই লিখে নেওয়ার উদ্দেশ্য কী ? 

উঃ নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ শীর্ষক নাট্যাংশে প্রশ্নোধৃত উক্তিটির বক্তা গুপ্তচর সন্দেহে ধৃত চন্দ্রগুপ্ত। 

» সে অর্থাৎ, চন্দ্রগুপ্ত মাসাধিক কাল ধরে গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কাছে গ্রিক যুদ্ধরীতি, সম্রাটের বাহিনী চালনা, ব্যুহ রচনা প্রণালী, সামরিক নিয়ম ইত্যাদি শিখেছিলেন এবং তা তিনি এক পত্রে লিখে নিচ্ছিলেন।

 » চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন মগধের রাজপুত্র। মহাপদ্মনন্দের পুত্র। কিন্তু বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ সিংহাসন দখল করে তাঁকে রাজ্য থেকে নির্বাসিত করেন। এমন সময় তিনি ম্যাসিডনের সম্রাট সেকেন্দরের দিগবিজয়ের কাহিনি শােনেন। সেকেন্দার ভারতবর্ষীয় বীর পুরুকেও পরাজিত করেছেন শুনে তাঁর সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক যুদ্ধরীতির পাঠ নিচ্ছিলেন তাঁর হারানাে রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য। এমন সময় তিনি জানতে পারেন সেকেন্দার দিগবিজয় অসম্পূর্ণ রেখে দেশে ফিরে যাবেন। তাই সেলুকসের কাছে তিনি যা শিখেছিলেন তা একটি পত্রে লিখে নিচ্ছিলেন। 

৫.১০ আন্টিগােনস নাটকের এই দৃশ্যে সেলুকসকে ‘বিশ্বাসঘাতক' বলেছে। তােমার কি সেলুকসকে সত্যিই বিশ্বাসঘাতক’ বলে মনে হয় ? যুক্তি-সহ আলােচনা করাে। 

উঃ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে আন্টিগােনস সেলুকসকে ‘ বিশ্বাসঘাতক’ বলেছেন। সেলুকস ছিলেন গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের সেনাপতি। কিন্তু তিনি ভারতীয় রাজ্য মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্তকে গ্রিক যুদ্ধরীতি সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন, আন্টিগােনসএর চোখে তা ছিল বিশ্বাসঘাতকতা। কিন্তু আমরা সেলুকসকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলতে পারি না। কারণ, সেলুকস সম্রাটের কোনাে ক্ষতি করার জন্য চন্দ্রগুপ্তকে গ্রিক যুদ্ধরীতি রপ্ত করতে শেখাননি। বরং, স্বরাজ্য থেকে নির্বাসিত এক অসহায় রাজপুত্রকে তাঁর রাজ্যলাভে সাহায্য করেছেন। 

৫.১১' নিরস্ত হও।'—কে এই নির্দেশ দিয়েছেন ? কোন পরিস্থিতিতে তিনি এমন নির্দেশ দানে বাধ্য হলেন ? 

 উঃ নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটক থেকে সংকলিত প্রশ্নোধৃত নির্দেশটি দিয়েছিলেন ম্যাসিডনের রাজা সেকেন্দার। 

» দিগবিজয় নিয়ে কথােপকথনরত সেকেন্দার ও তাঁর সেনাপতি সেলুকসের নিকট গুপ্তচর সন্দেহে এক যুবককে ধরে নিয়ে আসে সৈন্যাধ্যক্ষ আন্টিগােনস। রাজার প্রশ্নের উত্তরে যুবকটি নিজেকে মহাপদ্মনন্দের পুত্র চন্দ্রগুপ্ত পরিচয় দিয়ে জানান, বৈমাত্রের ভাইয়ের কাছ থেকে সিংহাসন পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কাছে গ্রিক যুদ্ধ প্রণালী শিখেছিলেন। এমন সময় আন্টিগােনস সেলুকসকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বললে উভয়ের মধ্যে একটি দ্বন্দ্বঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেলুকস তাঁর পদমর্যাদার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে আন্টিগােনস তাঁকে পুনরায় বিশ্বাসঘাতক বলেন। ফলে অপমানিত সেলুকস তাঁকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য তরবারি বের করলে আন্টিগােনসও উদ্যত তরবারি সেলুকসের শির লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করেন কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত দক্ষতার সঙ্গে তা প্রতিহত করেন। এই পরিস্থিতিতে সম্রাট সেকেন্দার নিরস্ত হওয়ার নির্দেশ দান করতে বাধ্য হন। 

৫.১২ ‘আন্টিগােনস লজ্জায় শির অবনত করিলেন। তাঁর এহেন লজ্জিত হওয়ার কারণ কী ? 

উঃ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে দিগবিজয় নিয়ে কথােপকথনরত সেকেন্দার ও সেলুকসের নিকট গুপ্তচর সন্দেহে এক যুবককে ধরে আনেন গ্রিক সৈন্যাধ্যক্ষ আন্টিগােনস। যুবক নিজেকে মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত হিসেবে সম্রাটের নিকট পরিচয় দেন। এবং জানান, বৈমাত্রেয় ভাইয়ের কাছ থেকে রাজ্য উদ্ধারের জন্য সেলুকসের কাছে তিনি গ্রিক যুদ্ধ প্রণালী রপ্ত করছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে আন্টিগােনস সেনাপতি সেলুকসকে বিশ্বাসঘাতক বললে অপমানিত সেলুকস তাকে শিক্ষাদানের জন্য তরবারি বের করেন আন্টিগােনস ক্ষিপ্র হাতে নিজের তরবারি সেলুকসের শির লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করেন। কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই আক্রমণ প্রতিহত করেন। চন্দ্রগুপ্তের তরবারির আঘাতে আন্টিগােনস-এর তরবারি ভূপতিত হয়। তাই একজন ভারতীয়ের কাছে নিজের এই পরাজয়ে এবং সম্রাটের সামনে নিজের ঔদ্ধত্য প্রকাশের কারণে আন্টিগােনস লজ্জায় শির অবনত করেছিলেন।

৫.১৩ নাট্যাংশ অবলম্বনে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের পরিচয় দাও।

উঃ  নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশের একজন প্রধান চরিত্র হল, গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার। নাট্যাংশ থেকে জানতে পারা যায়, তিনি ম্যাসিডনের রাজা। আলােচ্য নাট্যাংশে গ্রিক সম্রাটের একাধিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়। নাটকের শুরুতেই দেখা গিয়েছে সেকেন্দারের মধ্যে এক ধরনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা আছে। তাই তিনি ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর চরিত্রে দিগবিজয়ের আকাঙ্ক্ষাও দেখা গিয়েছে। তাই তিনি সেলুকসকে বলেন, দিগবিজয় করে জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চান। কিন্তু তিনি বাস্তববাদী ও পর্যবেক্ষণশীল। সেজন্যই তিনি সমগ্র এশিয়া জয় না করে অর্ধেক এশিয়া জয় করে ফিরে যেতে চেয়েছেন। পর্যবেক্ষণ শক্তি ছিল বলেই তিনি ভারতবর্ষের শাসকদের চরিত্রে শিশুর সারল্য, দেহে বজ্রের শক্তি, চোখে সূর্যের দীপ্তি, বক্ষের সাহস দেখে বিস্মিত হয়েছেন। তাঁর কাছে পরাজিত ও বন্দি বীর পুরুর নির্ভীক কথায় তিনি চমকে উঠেছেন। তিনি অর্ধেক এশিয়া জয় করে এসে ভারতবর্ষের রাজা পুরুর কাছেই প্রথম বাধা পেয়েছেন বলে মনে করেছেন। আবার পুরুকে তাঁর নিজ রাজ্য প্রত্যর্পণ করে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। আবার গুপ্তচর সন্দেহে ধৃত চন্দ্রগুপ্তের তিনি পরীক্ষা নিয়েছেন। চন্দ্রগুপ্তের সাহসিকতা ও সত্যবাদিতা দেখে তাকে মুক্তি দিয়েছিলেন। আবার সৈন্যাধ্যক্ষের স্পর্ধিত আচরণের জন্য তাঁকে নির্বাসিত করেছেন। সেনাপতিকে তাঁর আচরণের জন্য সাবধান করে দিয়েছেন। এইভাবে সমগ্র নাট্যাংশে নাটককার সম্রাট সেকেন্দারের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। 

৫.১৪ চন্দ্রগুপ্তের প্রতি সেকেন্দারের কীরূপ মনােভাবের পরিচয় নাট্যদৃশ্যে ফুটে উঠেছে, তা উভয়ের সংলাপের আলােকে বিশ্লেষণ করাে। 

উঃ নাটককার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে দিগবিজয় নিয়ে কথােপকথনরত সেকেন্দার ও সেলুকসের কাছে সৈন্যাধ্যক্ষ আন্টিগােনস গুপ্তচর সন্দেহে চন্দ্রগুপ্তকে বন্দি করে আনে। সম্রাট বন্দি চন্দ্রগুপ্তের আত্মপরিচয় ও সেইসঙ্গে তাঁর অভিপ্রায় জানতে চান। চন্দ্রগুপ্ত যে সেলুকসের কাছে গ্রিক যুদ্ধ প্রণালী রপ্ত করেছেন, তা জেনে সম্রাট সেকেন্দার বিস্ময়ে সেলুকসের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। আবার সেলুকস ও আন্টিগােনসের পরস্পরের বিবাদে চন্দ্রগুপ্ত জড়িয়ে পড়লে সম্রাট তিনজনকেই নিরস্ত হওয়ার আদেশ দিয়েছেন। অতঃপর সম্রাট তাঁকে বন্দি করতে চাইলে চন্দ্রগুপ্ত তাঁর বন্দিত্বের কারণ জানতে চেয়ে জানান, সম্রাট তাঁকে বধ না-করে বন্দি করতে পারবে না। চন্দ্রগুপ্তের মুখে এ কথা শুনে সম্রাট খুশি হয়ে তাঁকে এতক্ষণ পরীক্ষা করছিলেন জানিয়ে তাঁকে নির্ভয়ে রাজ্যে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেন। সেইসঙ্গে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও দৃঢ়চেতা মানসিকতা দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করেন—পরবর্তীকালে সে তাঁর হৃত রাজ্য উদ্ধার করবে এবং দিগবিজয়ী হবে। 

৬ নীচের বাক্যগুলি থেকে সন্ধিবদ্ধ পদ খুঁজে নিয়ে সন্ধিবিচ্ছেদ করাে : 

৬.১ আমি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখি।

উঃ নির্বাক = নিঃ + বাক।

৬.২ বিশাল নদ-নদী ফেনিল উচ্ছ্বাসে উদ্দাম বেগে ছুটেছে। 

উঃ উচ্ছ্বাস = উৎ + শ্বাস। উদ্দাম = উৎ + দাম। 

৬.৩ সে নির্ভীক নিষ্কম্পস্বরে উত্তর দিলাে, ‘রাজার প্রতি রাজার আচরণ!'

উঃ নির্ভীক = নিঃ + ভীক। নিষ্কম্প = নিঃ + কম্প। 

৬.৪ আমি এসেছি শৌখিন দিগ্বিজয়ে।

উঃ দিগ্বিজয়ে
= দিক + বিজয়ে। 

৬.৫ তুমি হৃতরাজ্য উদ্ধার করবে। 

উঃ  উদ্ধার = উৎ + হার।

৭ ব্যাসবাক্য-সহ সমাসের নাম লেখাে : দৈত্যসৈন্য, নদনদী, স্নেহছায়া, অসম্পূর্ণ, বিজয়বার্তা, অভ্রভেদী। 

»দৈত্যসৈন্য =যিনি দৈত্য তিনি সৈন্য-সাধারণ কর্মধারয় সমাস।

»নদনদী = নদ ও নদী —দ্বন্দ্ব সমাস। 

»স্নেহছায়া = স্নেহের ছায়া - সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস। স্নেহ রূপ ছায়া —রূপক কর্মধারয় সমাস। 

»অসম্পূর্ণ = অ (নয়) সম্পূর্ণ - নঞ্তৎপুরুষ সমাস। 

»বিজয়বার্তা = বিজয়ের বার্তা - সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস। বিজয় সূচক বার্তা –মধ্যপদলােপী কর্মধারয় সমাস। 

»অভ্রভেদী = অভ্রভেদ করে যা - উপপদ তৎপুরুষ সমাস।

৮ ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করাে : 

৮.১ হেলেন সেলুকসের হস্ত ধরিয়া তাঁহার পার্শ্বে দণ্ডায়মানা।

উঃ
সাধারণ বর্তমান কাল। 

৮.২ এই মরুভূমি স্বেচ্ছাচারের মতাে তপ্ত বালুরাশি নিয়ে খেলা করছে।

উঃ
ঘটমান বর্তমান কাল। 

৮.৩ চমকিত হলাম।

উঃ
পুরাঘটিত অতীত কাল। 

৮.৪ আমার শিবিরে তুমি গুপ্তচর হয়ে প্রবেশ করেছ।

উঃ
পুরাঘটিত বর্তমান কাল। 

৮.৫ নির্ভয়ে তুমি তােমার রাজ্যে ফিরে যাও।

উঃ
বর্তমান অনুজ্ঞা। 

৯ নিম্নরেখাঙ্কিত শব্দগুলির কারক-বিভক্তি নির্দেশ করাে : 

৯.১ কী বিচিত্র এই দেশ!

উঃ
কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।

৯.২ আমি বিস্মিত আতঙ্কে চেয়ে থাকি। 

উঃ  করণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি। | 

৯.৩ মদমত্ত মাতঙ্গ জঙ্গমপর্বতসম মন্থর গতিতে চলেছে। 

উঃ  কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি 

৯.৪ বাধা পেলাম প্রথম-সেই শতদ্রুতীরে

উঃ
অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি। | 

৯.৫ আমি যা শিখেছি তা এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম।

উঃ
অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।

১০ নীচের শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করাে : স্থিরভাবে, নিষ্কম্পস্বরে, বিজয়বাহিনী, চন্দ্রগুপ্ত, আর্যকুলরবি। 

» স্থিরভাবে = স্থির-ভা-বে; (মুক্তদল—ভা, বে (২ টি), রুদ্ধদল-স্থির (১টি)]। 

» নিষ্কম্পস্বরে = নি-কম্প-স্ব-রে; (মুক্তদল—প, স্ব, রে (৩টি), রুদ্ধদল নিষ, কম্ (২ টি) ]। 

»বিজয়বাহিনী =বি-জয়-বা-হি-নী; (মুক্তদল-বি, বা, হি, নী (৪টি), রুদ্ধদল-জয় (১টি) ] ।

»চন্দ্রগুপ্ত = চন্দ্র-গুপ-ত; (মুক্তদল-দ্র, ত (২ টি), রুদ্ধদল—চন, গুপ (২ টি)]। > 

»আর্যকুলরবি = আর্-য-কু-ল-র-বি; [মুকদল—য,কু, ল, র, বি (৫টি), রুদ্ধদল —আর (১টি)]।

 ১১ নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করাে : 

১১.১ নদতটে শিবির-সম্মুখে সেকেন্দার ও সেলুকস অস্তগামী সূর্যের দিকে চাহিয়া ছিলেন। (দুটি বাক্যে ভেঙে লেখাে) 

উঃ নদতটে শিবির-সম্মুখে সেকেন্দার ও সেলুকস ছিলেন। তাঁরা অস্তগামী সূর্যের দিকে চাহিয়া ছিলেন। 

১১.২ আমার কাছে কীরূপ আচরণ প্রত্যাশা করাে ? (পরােক্ষ উক্তিতে) 

উঃ  বক্তা শ্রোতাকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, তিনি তাঁর (বক্তা) কাছে কীরূপ আচরণ প্রত্যাশা করেন। 

১১.৩ জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চাই। (না-সূচক বাক্যে) 

উঃ জগতে একটা কীর্তি না রেখে যেতে চাই না।

 ১১.৪ আমি যা শিখেছি তা এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম। (সরল বাক্যে) 

উঃ  আমার শেখা বিষয়গুলি এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম। 

১১.৫ তােমার অপরাধ তত নয়। (হাঁ-সূচক বাক্যে) 

উঃ  তােমার অপরাধ বেশ কম।

১১.৬ এক গৃহহীন নিরাশ্রয় হিন্দু রাজপুত্র ছাত্র হিসেবে। তাঁর কাছে উপস্থিত, তাতেই তিনি ত্রস্ত। (নিম্নরেখ শব্দের বিশেষ্যরূপ-ব্যবহার করে বাক্যটি লেখাে) 

উঃ এক গৃহহীন নিরাশ্রয় হিন্দু রাজপুত্রের ছাত্রের উপস্থিতিতেই তিনি ত্রস্ত। 

১১.৭ কী বিচিত্র এই দেশ! (নিদের্শক বাক্যে) 

উঃ বড়ােই বিচিত্র এই দেশ। 

১১.৮ ‘সত্য সম্রাট। (না-সূচক বাক্যে) ) 

উঃ মিথ্যা নয় সম্রাট। 

১১.৯ এ দিগবিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাচ্ছেন কেন সম্রাট ? (পরােক্ষ উক্তিতে) 

উঃ  বক্তা সম্রাটের কাছে এ দিগবিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলেন। 

১১.১০ ‘ভারতবাসী মিথ্যা কথা বলতে এখনও শিখে নাই। (হা-সূচক বাক্যে)

উঃ  ভারতবাসী এখনও সত্য কথা বলে। 

১১.১১ আমি এরূপ বুঝি নাই। (হা-সূচক বাক্যে) 

উঃ আমি অন্যরূপ বুঝিয়াছি। 

১১.১২ সেকেন্দার সাহা এত কাপুরুষ তা ভাবি নাই। (নিম্নরেখাঙ্কিত শব্দের বিশেষ্যের রূপ ব্যবহার করাে) 

উঃ  সেকেন্দার সাহার কাপুরুষতার পরিচয় পাব, তা ভাবি নাই 

১১.১৩ সম্রাট আমায় বধ না করে বন্দি করতে পারবেন না। যৌগিক বাক্যে) ) 

উঃ সম্রাট আমায় বধ করুন না হলে বন্দি করতে পারবেন না 

১১.১৪ আমি পরীক্ষা করছিলাম মাত্র। (জটিল বাক্যে) 

উঃ  আমি যা করছিলাম তা শুধুমাত্রই পরীক্ষা। 

১১.১৫ ‘নির্ভয়ে তুমি তােমার রাজ্যে ফিরে যাও। (না-সূচক বাক্যে) 

উঃ  ভয় না করে তুমি তােমার রাজ্যে ফিরে যাও।



Post a Comment

2 Comments