Recents in Beach

বোঝাপড়া সহায়িকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর

বোঝাপড়া 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


বিষয় সংক্ষেপ

জীবনে ভালােমন্দ যাই আসুক না কেন, সত্য মনে করে তাকে সহজে গ্রহণ করতে হবে। কেউ তােমাকে ভালােবাসবে, কেউ বাসবে না—এটিই স্বাভাবিক। ব্যাপারটি নিজের ক্ষেত্রেও ঠিক। এটিই স্বাভাবিক যে, সবাই সবার জন্য নয়। আমরা একে অন্যকে ফাঁকি দিই। সুতরাং কোটি কার ভাগে আছে, কেউ জানে না। প্রাচীন কাল থেকে এটিই চলে আসছে। কেউ আঘাত বাঁচিয়ে চলতে পারে না। সুতরাং, সত্যকে সহজভাবে মেনে নেওয়াই ভালাে।

জীবনে বহু ঝড়-ঝঞ্জা পেরিয়ে সুখ পাওয়া যায়। কোথায়, কীভাবে আঘাত আসে কেউ বলতে পারে না। অপ্রত্যাশিত আঘাতে বুকের পাঁজর ভাঙতে পারে, আর্তনাদে আকাশবাতাস মুখর হতে পারে, কিন্তু তাই নিয়ে বিবাদ চলে না। বরং সমস্ত কিছু সহ্য করে টিকে থাকাই শ্রেয়, অন্যথায় সমূহ বিপদ আসতে পারে। সামান্য ঘটনাই তখন মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

জগতে কেউ কারও মতাে নয়, প্রত্যেকেই আলাদা। তবু একে অন্যকে পিছনে ফেলে এগােতে চায়। অথচ হাত বাড়ালেই বন্ধু পাওয়া যায়। পাওয়া যায় পরম সুখ। সর্বাবস্থায় আকাশ সুনীল থাকে, ভােরের আলাে মধুর হয়, এমনকি সহসা মরণ এলে, জীবনে বাঁচার ইচ্ছাই প্রবল হয়। যাকে ছাড়া জীবন শূন্য বলে মনে হয়, প্রকৃতপক্ষে তাকে ছাড়াও পৃথিবী মনােরম।

সুতরাং, দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে থাকা ঠিক নয়। সুন্দরের সঙ্গে বিবাদ করলে নিজেকে আঘাত করা হয়। মনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সুন্দরের সন্ধান করাই জীবনের সাধনা। দুঃখের প্রদীপ জ্বালিয়েই আলোর সন্ধানে বের হতে হয।সেটিই আসল, সেখানেই স্বাতন্ত্র্য।তা না হলে ভালোমন্দের কোনও তফাৎ থাকতো না।মনকে তাই বোঝাতে হবে,ভালোমন্দ যা-ই আসুক সহজভাবে সব কিছু গ্রহণ করতে  হবে,কবির ভাষায় ----"ভালো মন্দ যাহাই আসুক / সত্যেরে লও সহজে। "

নামকরণ

“নামকে যাহারা নামমাত্র বলিয়া মনে করেন, আমি তাহাদের দলে নই” প্রকৃতপক্ষেই রবীন্দ্রনাথ নামকরণের বিশেষত্বে বিশ্বাসী। তাই তিনি স্বয়ংই আলােচ্য কবিতাটির নামকরণ করেছেন ‘বােঝাপড়া। মনই আমাদের পরিচালক, তাই আমাদের আচরণের মধ্য দিয়েই মনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। প্রদত্ত কবিতায় সেই মনের সঙ্গে মানুষের বােঝাপড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন কবি।

    বিপর্যস্ত সময় আমাদের মনকে দুর্বল করে, বিপথে চালনা করে। কিন্তু কবি চেয়েছেন, দুঃখের ঘূর্ণিঝড়েও আমাদের মনকে বােঝাতে, যাতে মন সত্যের সরল শক্তিকে আঁকড়ে ধরে। তব চঞ্চলা মনের ধর্মই হল ক্ষুধা, তৃয়া ও ঘুমের মতাে ঈর্ষা, ফাঁকি, ঘৃণা প্রভৃতির আকর্ষণে সাড়া দেওয়া। অনাদর্শের হাতছানি, লােভের বাঁধনে মন বাঁধা পড়ে। তার মাঝেও মনের সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব করতে হবে, সত্যকে কোনাে মতেই অস্বীকার করা চলবে না। মনকে আরও বােঝাতে হবে, ভালােবাসার দরজা খুলে, বিভেদের প্রাচীর ভুলে, সংগ্রামের দ্রুত তালে তাকে হাঁটতে হবে। এইভাবে কবি আমাদের সামাজিক অবস্থায় মানসিক দ্বন্দ্বকে তুলে ধরেছেন। এই মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে সমাজ-বর্ণনা ও সত্যপ্রতিষ্ঠার বােঝাপড়া নামকরণটিকে সার্থক করে তুলেছে। অর্থাৎ, নামকরণটি ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে উঠেছে।

১.১  জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত কোন পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন  

উঃ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী ও বালক পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন।             

১.২, ভারতের কোন প্রতিবেশী দেশে তাঁর লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয় ? 

উঃ ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গান ‘আমার সােনার বাংলা জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়। 

২ নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :  

২.১ 'সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়।' --- কোনটি সবার চেয়ে শ্রেয় ?       

উঃ জীবনে দুঃখের সাগর পেরিয়েই সুখের কিনারায় উঠতে হয়। একাজে যে বিপদ আছে, তা মাথায় রেখেই বিবেচনা করে এগিয়ে যেতে হয়। নতুবা মুহূর্তের ভুলে সব কিছু ওলটপালট হয়ে যেতে পারে। সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ার বা ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই সতর্ক হয়ে চলতে হবে, অন্যের সঙ্গে বিবাদ করে, সবার সাথে মিলে মিশে দুঃখ-সাগরে ভেসে থাকতে হবে। তাকে অবলম্বন করে টিকে থাকতে হবে। আর সেটিই হবে উপযুক্ত, সংগত ও শ্রেয়।  

২.২ ‘ঘটনা সামান্য খুবই।” ---কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে ?  

উঃ  সামান্য ঘটনা বলতে, গভীর চিন্তা না-করে অগ্রাহ্য ও অবহেলার যােগ্য ঘটনাকে বােঝানাে হয়েছে। জীবনে চলার পথে আমরা অনেক বিষয়কে ভাবনা চিন্তার মধ্যে আনি না। যার থেকে কোনাে ভয় নেই মনে করি, দেখা যায়, সে-ই আমাদের সমূহ বিপত্তির কারণ। কবি সেই আপাত তুচ্ছ বলে বিবেচ্য বিষয়কেই সামান্য ঘটনা বলেছেন।       

২.৩‘তেমন করে হাত বাড়ালে/সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।' --- উদ্ধৃতিটির নিহিতার্থ স্পষ্ট করাে।  

উঃ  ব্যক্তিমাত্রই আত্মপরায়ণ। সে বিনা স্বার্থে এক পা ফেলতেও রাজি নয়। আবার এই ব্যক্তিই যখন পরার্থে সব কিছু বিসর্জন দিয়ে আত্মসুখ খুঁজে নেয়, হয়ে ওঠে পরম বন্ধু, তখন সে-ই খুঁজে পায় অনেক মন্দের মাঝে ভালাের খোঁজ। মন ভরে ওঠে তৃপ্তিতে। তবে এর জন্য পারস্পরিক ত্যাগ স্বীকার দরকার হয়। প্রত্যেকেই যদি নিজের সামান্য স্বার্থ ত্যাগ করে এগিয়ে আসে, তবে পাওয়া যায় পরম শান্তি। অর্থাৎ স্বার্থকে দূরে ঠেলে বন্ধুত্বের হাত বাড়ালেই জীবনে খুঁজে পাওয়া যায় অনেকটা সুখ ।

২.৪ ‘মরণ এলে হঠাৎ দেখি/মরার চেয়ে বাঁচাই ভালাে।'--- ব্যাখ্যা করাে।  

উঃ  মানুষের মধ্যে দুঃখবােধ আছে। মাঝেমধ্যে তা প্রবল। আকার ধারণ করে। এই সময় সে জীবন সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। তখন সে মনে করে, মরে যাওয়াই ভালাে। এ এক ধরনের পলায়নপ্রবৃত্তি। কবির কাছে তা আসলে ভয়ানক মিথ্যে। তিনি মনে করেন, মানুষ আসলে বাঁচতেই চায়। কবির ভাষায় ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে | মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই। কিংবা যদি কেউ বলে, ‘মরলেই বাঁচি’ তাহলে বুঝতে হবে—‘দুঃখে আনন্দ পেয়ে/পরম তৃপ্তিতে ঢেউ তােলা কথা সব।  

২.৫ ‘তাহারে বাদ দিয়েও দেখি / বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর।'--- উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে জীবনের কোন্ সত্য প্রকাশ পেয়েছে ?         

উঃ উদ্ভািতিটির মধ্য দিয়ে কবি পার্থিব জীবনের মােহময়তার প্রতি মানুষের আসক্তিকেই অভিব্যক্ত করেছেন। জাগতিক মােহে আচ্ছন্ন জীবন সব সময় সুখের সন্ধানে ব্যাপৃত রয়েছে। মাঝে মাঝে এই আসক্তি এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে যে, সে মনে করে নির্দিষ্ট কাউকে ছাড়া তার জীবন শূন্য। তার কোনাে মূল্যই নেই। এই মানসিকতা তাকে তার অপ্রাপ্তি গুলিকে বড়াে করে দেখায়। ফলে সে নিজেকেই ছােটো করে তােলে। এখানেই কবির বক্তব্য—মহাবিশ্বে কেউ কারাের জন্য অপরিহার্য নয়। যতই দুঃখ-শােক-ব্যথাবেদনা মানুষকে ব্যথিত করুক না কেন, তা ক্ষণিকের। পরক্ষণেই দুঃখ ভুলে মানুষ আবার তার স্বাভাবিক জীবন শুরু করে। অতীতকে ভুলে যায়। আগামীর স্বপ্নে নিজেকে সাজিয়ে তােলে। জগৎ তখন বিশাল অস্তিত্ব নিয়ে মানুষের মনে অনুভূত হয়।       

২.৬ কীভাবে মনের সঙ্গে বােঝাপড়া করতে হবে ?         

উঃ জীবনে এমন অনেক কিছুই ঘটে, যা সহজে মেনে নেওয়া যায় না। তবুও মেনে নিতে হয়। কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে নিজের মনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। কবি তাই বলেনঅস্তগামী সূর্যের বিপরীতে দীর্ঘতর ছায়াটিকে বড়াে পারে। সেখানে কারও সঙ্গে পার্থক্য না থাকাই উচিত। জগতে সবাই একরকম হয় না, তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকে। আর এই পার্থক্য ও বৈষম্য নিয়েই জীবন এগিয়ে চলে। তাই কারও সঙ্গে বিবাদ নাকরে বরং সব কিছুকে সহজে অতিক্রম করে জীবনে চলার পথে এগিয়ে যেতে হবে।                                 

২.৭ "দোহাই তবে এ কাৰ্যটা/যত শীঘ্র পারাে সারাে।"-- কবি কোন্ কার্যের কথা বলেছেন ? সেই কার্যটি শীঘ্র সারতে হবে কেন ?   

উঃ জীবনে চলার পথে প্রয়ােজনমতাে মনের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলে সহজ-সত্যিকে মেনে নিয়ে আলাের প্রদীপ জ্বালানাের কথাই কবি এখানে বলেছেন। আসলে মনের দুঃখ-গ্লানি সরিয়ে সানন্দে নিজের কাজ করে যাওয়াই কবির অভিপ্রায়।               

 » দুঃখভরা মনে, বিরসভাবে বসে থাকলে নিজের মনটিই কেবল ভারাক্রান্ত হয়। তাতে জগতের কোনাে ক্ষতি হয় না। মানুষ দুঃখ পায়, আঘাত পায়, তবু আকাশ কিন্তু সুনীল থাকে। আপনজনের মৃত্যুর কঠিন আঘাতে জীবন আপাতত স্তব্ধ হবে বলে মনে হলেও, কিছু সময় পর স্বাভাবিক গতিতে সে সামনে এগিয়ে যায়। কবি অন্যত্র তাই বলেছেন—“যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই । যাহা পাই তাহা চাই না। ব্যক্তিবিশেষের অনুপস্থিতিতে জগতের কোনাে পরিবর্তন হয় না। সুতরাং, মনের সঙ্গে বােঝাপড়া করে নিজের সমূহ কর্তব্য সারার জন্যই কবি মনের সঙ্গে বােঝাপড়ার ব্যাপারটি শীঘ্র সারতে বলেছেন। 

২.৮ কখন আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালানাে সম্ভব ?                           

উঃ একটা প্রদীপ যেমন একটা অন্ধকার ঘরকে আলােকজ্জল করতে পারে, তেমনই দুঃখভারাক্রান্ত মন ও ভেঙে পড়া কান্নার মধ্য দিয়ে গুমরে থাকা কষ্টকেও লাঘব করতে পারে। এখানে আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালানাে কথাটি খুবই তাৎপর্যবাহী। কবির কথানুসারে, নিজের দুঃখকে বড়াে করে দেখলে নিজের জীবনই ভারাক্রান্ত হয়। তাতে পৃথিবীর কারও কিছু আসবে যাবে না। সুতরাং, দুঃখ ভুলে, কারও সঙ্গে নিজের পার্থক্য বিবেচনা না-করে সহজে সব মেনে নিলেই আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালানাে সম্ভব হবে।   

২.৯ 'ভুলে যা ভাই, কাহার সঙ্গে/কতটুকুন তফাত হলাে।'—এই উভৃতির মধ্যে জীবনের চলার ক্ষেত্রে কোন্ পথের ঠিকানা মেলে?                               

উঃ উদ্ধৃত পঙক্তির মাধ্যমে কবি সার্বিক সমন্বয়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন। মনের ঔদার্যে সবাই একাসনে বসতে পারে। সেখানে কারও সঙ্গে পার্থক্য না থাকাই উচিত। জগতে একরকম হয় না,তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকে। আর এই পার্থক্য ও বৈষম্য নিয়েই জীবন এগিয়ে চলে। তাই কারও সঙ্গে বিবাদ না করে বরং সব কিছুকে সহজে অতিক্রম করে জীবনে চলার পথে এগিয়ে যেতে হবে।   

২.১০ ‘অনেক ঝঞা কাটিয়ে বুঝি/এলে সুখের বন্দরেতে,—“ঝঞা কাটিয়ে আসা বলতে কী বােঝাে? 

উঃ জীবনে চলার পথে হাজারও বাধা-বিপত্তির সৃষ্টি হয়। তবুও সেইসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে হয়। বাধাবিঘ্ন, দুঃখ-যন্ত্রণায় কাতর হলে মন দুর্বল হয়ে পড়ে, লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। দুঃখকে অতিক্রম করেই সুখের সন্ধান মেলে। জীবনে চলার পথে বাধাবিঘ্নরূপ কাঁটা সরিয়ে সাফল্যের সুগন্ধ পুষ্প লাভেই প্রকৃত আনন্দ পাওয়া যায়। সাফল্য লাভের পথে আলাে, দুঃখ-যন্ত্রণা, ব্যথা-বেদনা-সহ সমস্ত বিরুদ্ধ পরিস্থিতিকে জয় করাকেই ‘ঝা কাটিয়ে আসা’ বলে উপলদ্ধি করা যায় ।  

৩ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে:             

৩.১ ‘ভালাে মন্দ যাহাই আসুক /সত্যেরে লও সহজে।'-- তুমি কি কবির সঙ্গে একমত ? জীবনে চলার পথে নানা বাধাকে তুমি কীভাবে অতিক্রম করতে চাও ?   

উঃ আমি কবির এই কথার সঙ্গে সহমত পােষণ করি।     

» আমি বিশ্বাস করি, জীবনে কখনও নিরবচ্ছিন্ন সুখ যেমন মেলে না ঠিক তেমনই দুঃখও দীর্ঘস্থায়ী হয়। পালা করে একটির পর অন্যটি আসে। তাই সুখে যেমন অতি উচ্ছ্বসিত হতে নেই, তেমনই দুঃখেও ভেঙে পড়তে নেই— দুর্বল হতে নেই। আর এই পরিস্থিতি যে মানিয়ে নিতে পারে, সেই জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে পারে। জীবনে চলার পথে যেসব বাধা আসবে সেগুলিকে আমি পরিস্থিতি অনুযায়ী অতিক্রম করার চেষ্টা করব। কারণ, জীবন কখনই সহজ পথে প্রবাহিত হয় না, প্রতি পদক্ষেপেই আসবে কোনাে না কোনাে প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু তাতে যদি আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি, তাহলে জীবনযুদ্ধে হেরে যাব। সেজন্য উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিয়ে জীবনের ময়দানে টিকে থাকতে হবে।                        

৩.২। মনেরে আজ কহ যে,/ভালাে মন্দ যাহাই আসুক। সত্যেরে লও সহজে। -কবির মতাে তুমি কি কখনও মনের সঙ্গে কথা বললা ? সত্যকে মেনে নেওয়ার জন্য মনকে তুমি কীভাবে বােঝাবে—একটি নীচের শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করে মুক্ত দল ও পরিস্থিতি কল্পনা করে বুঝিয়ে লেখাে।                                      

উঃ  কবি একটি গানে বলেছিলেন, “ও তুই মুখ ফুটে তাের মনের কথা একলা বলাে রে। কবির এই ভাবনার সাথে আমিও বিশ্বাসী। নিজের মনের সাথে আত্মকথনের অর্থ হল— কোথাও গিয়ে হয়ত নিজেকেই খুঁজে পাওয়া। কবির মতাে আমিও নিজের মনের সঙ্গে কথা বলি। আসলে মনের সঙ্গে এই কথা বলা একধরনের আত্মবিশ্লেষণের প্রক্রিয়া। নিজের ত্রুটিগুলিকে খুঁজে বের করে তাকে পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে যাচাই করে নেওয়া।                  

» জীবনে চলার পথে নানারকম বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই বলে থমকে গেলে চলে না। আমি বরাবরই পড়াশুনায় ভালাে পরীক্ষায় ভালােই নম্বর পাই। এই অবস্থায় যদি কোনােবার ফল খারাপ হয় কিংবা নম্বর কম পাই, তবে আমি ভেঙে পড়ব না। মনকে বােঝাব এটি সাময়িক। তারপর খুঁজে বের করব, কী কারণে আমার রেজাল্ট খারাপ হল। এ ব্যাপারে গুরুজনের পরামর্শ নেব। মনকে বােঝাব, আমি সাধ্যমতাে পরিশ্রম করিনি বলেই এমন হল। তা ছাড়া এটিই তাে জীবনের একমাত্র পরীক্ষা নয়। সুতরাং, হতাশ না-হয়ে পূর্ণ উদ্যমে আবার পড়ায় মন দেব। মনের সব হতাশা ঝেড়ে ফেলে আগামী পরীক্ষার জন্য নিজেকে আরও ভালােভাবে তৈরি করব। সব সময় মনে রাখব ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে’ —এই আপ্তবাক্যটি।      

৩.৩ তেমন করে হাত বাড়ালে / সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।—তেমন করে কথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও। এখানে কবি কী ধরনের সুখের ইঙ্গিত করেছেন লেখাে। 

উঃ  ‘তেমন করে কথাটির সাধারণ অর্থ সেই ভাবে। অন্যভাবে বলা যায় আন্তরিকভাবে। আসলে কবি বলতে চেয়েছেন আন্তরিকতার সঙ্গে, মনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নারেখে যদি পারস্পরিক সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে অনেকটাই সুখ বা আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়।                   

» কবি এখানে মানসিক সুখ-শান্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, মানসিক সুখই জীবনকে সহজ-সাবলীল-ছন্দময় করে তােলে। পার্থিব সুখ তথা ধন-দৌলত-অর্থ প্রধান নয়। আসল হল- মানসিক প্রশান্তি। এই মানসিক প্রশান্তি লাভেই প্রকৃত সুখ মেলে। পাওয়া যায় অনেকটা স্বস্তি। জগৎ ও জীবনকে পরম সুখের ও আনন্দের বলে মনে হয়।  

৪ রুদ্ধ দল চিহ্নিত করাে :  বােঝাপড়া, কতকটা, সত্যেরে, পাঁজরগুলাে, বিশ্বভুবন,অশুসাগর।

» বোঝাপড়া = বাে-ঝা-প-ড়া (মুক্তদল-বাে, ঝা, প, ডা, (৪টি), রুদ্ধদলশূন্য (০)]।                

» কতকটা = ক-তক্ - টা [মুকদল ---ক, টা, (২ টি), রুদ্ধদল—তক (১টি)]।                        

» সত্যেরে = সত্- তে -রে [মুক্তদল—তে, রে (২ টি), রুদ্ধদল—সতু (১টি)] ।               

»  পাজরগুলাে = পাঁ- জর -গু-লাে (মুক্তদল—পাঁ, গু, লাে (৩টি), রুদ্ধদল—জর (১টি)]।    

»বিশ্বভুবন = বিশ্ –শ (ব)-ভু-বন্ [মুক্তদলশ --শ  (ব), ভু (২ টি), রুদ্ধদল বিশ, বন্ (২ টি)] ।      

» অশুসাগর= অশ্-রু -সা-গর (মুক্তদল--রু , সা (২ টি), রুদ্ধদল—অশ, গর (২ টি)]  

৫ নীচের প্রতিটি শব্দের তিনটি করে সমার্থক শব্দ লেখাে : মন , জখম, ঝঞ্জা , ঝগড়া, সামান্য, শঙ্কা, আকাশ।

» মন = হৃদয়, হিয়া, চিত্ত ।     

» জখম =  ক্ষত, আঘাত, চোট।      

» ঝঞ্জা = ঝড়, বাদল, ঝটিকা । 

» ঝগড়া = কলহ, বিবাদ, বচসা।  

» সামান্য = তুচ্ছ, অল্প, কম।      

» শঙ্কা =  ভয়, আশঙ্কা, সংশয়।     

» আকাশ = গগন, অম্বর, শূন্য।

৬ নীচের প্রতিটি শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ দিয়ে শব্দজোড় তৈরি করে বাক্য রচনা করাে : আঁধার, সত্য, দোষ, আকাশ, সুখ।

» আঁধার (আলাে) = আলাে-আঁধার > ঘন জঙ্গলে চেয়েছেন আন্তরিকতার সঙ্গে, মনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নারেখে যদি পারস্পরিক সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া সূর্যের আলাে পড়ে যেন আলাে-আঁধারের খেলা চলছে। 

» সত্য (মিথ্যা) =সত্য -মিথ্যা > সত্য -মিথ্যা যাচাই করে তারপর যা করার করব 

» দোষ (গুণ) = দোষ-গুণ > দোষ-গুণ নিয়েই মানব সহজ-সাবলীল-ছন্দময় করে তােলে।  

» আকাশ (পাতাল) = আকাশ-পাতাল > যা হয় যাবে, অত সব আকাশ-পাতাল ভেবে লাভ নেই।   

» সুখ (দুঃখ) = সুখ-দুঃখ > জীবনে সুখ-দুঃখ পালাক্রমে আসে, তাই সব অবস্থাতেই তৈরি থাকতে হবে।


 




Post a Comment

5 Comments

  1. খুব ভালো , আপনি যদি ভূগোল অষ্টম শ্রেণির সহায়িকা দেন তাহলে ভালো হয় ৷

    ReplyDelete
    Replies
    1. After few days I will upload...it needs so many time for typing..

      Delete