Recents in Beach

ভারতের প্রতিবেশী দেশসমূহ ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক অষ্টম শ্রেণী সহায়িকা প্রশ্নোত্তর

 

ভারতের প্রতিবেশী দেশসমূহ 

ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক

অধ্যায়ভিত্তিক সংজ্ঞা:

 1. প্রতিবেশী দেশ: কোনো দেশের আশেপাশের দেশগুলিকে সেই দেশের প্রতিবেশী দেশ বলা হয়। নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, চিন, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ হল ভারতের প্রতিবেশী দেশ।

2. ভারতীয় উপমহাদেশ: ভারতের সঙ্গে তার প্রতিবেশী দেশগুলির সামাজিক মিল যথেষ্ট। এই প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে ভারতের অবস্থান একেবারে মাঝখানে এবং আয়তন ও জনসংখ্যার বিচারে ভারত বৃহত্তম হওয়ায় এই অঞ্চলকে ভারতীয় উপমহাদেশ বলা হয়।

3. সার্ক (SAARC): 1985 সালে ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশ মিলে শান্তি, স্থায়িত্ব ও অর্থনৈতিক প্রগতির উদ্দেশ্যে যে সংস্থা গঠন করে, তাকে সার্ক (SAARC) বলে। 

4. নেপাল: নেপাল দেশটি ভারতের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। নেপালের প্রধান ভাষা নেপালি এবং এর রাজধানী হল কাঠমান্ডু। পর্যটন নেপালের বৃহত্তম শিল্প ও বিদেশি মুদ্রা আহরণের প্রধান উৎস। 

5. ভুটান : ভুটান দেশটি ভারতের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। ভুটানের প্রধান ভাষা হল জাংথা এবং রাজধানী হল থিম্পু। ভুটান ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে যথেষ্ট উন্নত। বজ্রপাত-সহ প্রবল বৃষ্টিপাত হয় বলে ভুটানকে বজ্রপাতের দেশ বলা হয়।

 6. বাংলাদেশ : ভারতের পূর্ব দিকের একটি প্রতিবেশী দেশ হল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রধান ভাষা হল বাংলা। বাংলাদেশের রাজধানীর নাম ঢাকা। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ এবং পাট শিল্প ও কুটির শিল্পে বেশ উন্নত।

7. মায়ানমার : ভারতের পূর্ব দিকের অপর একটি প্রতিবেশী দেশ হল মায়ানমার। এখানকার প্রধান ভাষা বর্মি এবং রাজধানী হল নেপাইদাউ। মায়ানমার খনিজ ও বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ। 

৪. শ্রীলঙ্কা : ভারতের দক্ষিণ দিকের প্রতিবেশী দেশ হল শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার প্রধান ভাষা সিংহলী এবং রাজধানী শ্রীজয়বর্ধনেপুরা কোট্টে। শ্রীলঙ্কার অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা হল কৃষিকাজ। চা, রবার ও মশলা উৎপাদনে এবং খনিজ সম্পদ উত্তোলনে শ্রীলঙ্কা যথেষ্ট উন্নত।

9. পাকিস্তান :
ভারতের উত্তর-পশ্চিমের একটি প্রতিবেশী দেশ হল পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রধান ভাষা উর্দু এবং এর রাজধানী হল ইসলামাবাদ। বৃষ্টিপাত কম হওয়া সত্ত্বেও ক্যারেজ প্রথায় জলসেচ করে পাকিস্তান কৃষিকাজে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছে। যা কিছু উৎপন্ন হয়, তার সবটাই সেই দেশ ব্যবহার করতে পারে না—কিছুটা উদ্বৃত্ত থাকে। তাই বিভিন্ন দেশে পণ দ্রব্য আদানপ্রদান বা বাণিজ্যিক লেনদেনের প্রয়োজন হয়। এই কারণে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা খুব প্রয়োজন।

1 .টীকা লেখো :—নেপালের পর্যটন শিল্প  অথবা, নেপালের পর্যটন শিল্পের বিবরণ দাও।

উঃ পর্যটন শিল্প হল নেপালের বৃহত্তম শিল্প ও বিদেশি মুদ্রা আহরণের প্রধান উৎস। কারণ, নেপাল হিমালয় পর্বতের কোলে অবস্থিত। ফলে পাহাড়-পর্বতবেষ্টিত এই দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতি মনোহর। নেপালের পর্যটন শিল্প সম্পর্কে আলোচনা করা হল—

1. পর্বতশৃঙ্গের সমাহার: পৃথিবীর দশটি উঁচু পর্বতশৃঙ্গের মধ্যে আটটি পর্বতশৃঙ্গই এ দেশে রয়েছে। আবার পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টও নেপালেই অবস্থিত।

2. পর্বত আরোহণের সুবিধা: নেপালে সারা পৃথিবী থেকে পর্বতারোহীরা পর্বতশৃঙ্গ আরোহণের জন্য আসেন। প্রতিবছর মাউন্ট এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, অন্নপূর্ণা প্রভৃতি শৃঙ্গগুলি জয় করার জন্য পৃথিবীর বহু মানুষ এখানে পৌঁছোন, যা নেপালের বহু মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের এটি একটি বৃহত্তম উৎস।

3. দর্শনীয় স্থান: নেপালের কাঠমান্ডু, নাগারকোট, জনকপুর, বিরাটনগর, পোখরা, লুম্বিনী প্রভৃতি শহরে প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন পর্যটকদের আকর্ষণ করে। কাঠমান্ডু এ দেশের রাজধানী, বিমানবন্দর ও প্রধান শহর। পশুপতিনাথের মন্দির, কপিলাবস্তু অট্টালিকা, মুক্তিনাথ, জনকপুর প্রভৃতি নেপালের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।

2.  ভুটান ফলপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিখ্যাত কেন?

উঃ
ভুটান ফলপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পে উন্নত, কারণ—

1. ফল চাষ :
প্রাকৃতিক বাধাজনিত কারণে ভুটান কৃষি ও শিল্পে খুব বেশি উন্নতি করতে পারেনি। ফলে পর্বতের ঢালে এবং উপত্যকায় প্রচুর পরিমাণে ফল চাষ হয়। বিশেষ করে কমলালেবু, আপেল, আনারস, আঙুর এখানকার প্রধান চাষযোগ্য ফল। এইসব ফল থেকে ফলপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে উঠেছে।

2. ফল চাষের অনুকূল জলবায়ু :
ভুটান দেশটি বেশি উচ্চতায় অবস্থান করায় এখানকার জলবায়ু শীতল নাতিশীতোষ্ণ  প্রকৃতির। এইরকম জলবায়ু ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে আদর্শ।

3. উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ:
নানা ধরনের ফল থেকে জ্যাম, জেলি, আচার, স্কোয়াশ প্রভৃতি তৈরির জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেছে। 

4. শিল্পজাত দ্রব্যের বিদেশে চাহিদা বৃদ্ধি : ভুটানে বিভিন্ন ফলের রস থেকে উৎপাদিত দ্রব্য বিদেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি করেছে।

3. ভারতের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে পাকিস্তানের পরিচয় দাও।

উঃ
অবস্থান: ভারতের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত প্রতিবেশী দেশটি হল পাকিস্তান।

উচ্চতম শৃঙ্গ  : পাকিস্তানের উচ্চতম শৃঙ্গ তিরিচমির (7690 মি)। 

প্রধান নদী: পাকিস্তানের প্রধান নদী সিন্ধু।

রাক্তধানী: পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ।

প্রধান ভাষা : পাকিস্তানের প্রধান ভাষা উর্দু।

প্রধান শহরসমূহ :
পাকিস্তানের প্রধান শহরগুলি হল—করাচি, লাহোর, পেশোয়ার প্রভৃতি।

কৃষিকাজ ও জলসেচ: বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়া সত্ত্বেও জলসেচের ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তান কৃষিকাজে বেশ উন্নত হয়েছে। মূলত সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলিতে বাঁধ দিয়ে প্রথমে জলাধার তৈরি করে একাধিক সেচ খাল কেটে জলসেচ করা হয়। কৃষিক্ষেত্রে জল নিয়ে যাওয়ার এই প্রথাকে ক্যারেজ প্রথা বলে। এখানকার উৎপাদিত ফসলগুলি হল – ধান, গম, তুলা, ভুট্টা ইত্যাদি। এ ছাড়াও খেজুর, পিচ, বাদাম, আপেল, বেদানা প্রভৃতি ফলের চাষ করা হয়।

শিল্প: সিমেন্ট, চিনি, বস্ত্র, চর্ম ও পশম শিল্প হল পাকিস্তানের প্রধান শিল্প। 

ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য : পাকিস্তান ভারত থেকে কয়লা, ইস্পাত, লৌহ আকরিক, চা, যন্ত্রপাতি, ওষুধ প্রভৃতি আমদানি করে। আবার উন্নত কার্পাস, চামড়া, কার্পেট ইত্যাদি ভারতে রপ্তানি করে।

4. পাকিস্তানের কৃষিকাজ জলসেচের ওপর নির্ভরশীল কেন?  অথবা, পাকিস্তানের কৃষিকাজের সঙ্গে জলসেচের সম্পর্কে  আলোচনা করো।

উঃ
পাকিস্তানের কৃষিকাজ জলসেচের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণ一

1. শুষ্ক জলবায়ু: পাকিস্তানে বৃষ্টিপাত হয় খুব কম অর্থাৎ জলবায়ু অত্যন্ত শুষ্ক ও চরম প্রকৃতির। অথচ দেশের মধ্য ও পূর্বাংশে কৃষির উপযোগী বিস্তীর্ণ উর্বর সমতলক্ষেত্র আছে।

2. খাদ্যশস্যের বিপুল চাহিদা:
বিপুল জনসংখ্যার জন্য দেশের অভ্যন্তরে খাদ্যশস্য-সহ বিভিন্ন প্রকার কৃষিজ ফসলের চাহিদাও খুব বেশি।

3. সেচখালের সুবিধা: চাষের উদ্দেশ্যে সিন্ধু ও তার উপনদীগুলিতে বাঁধ নির্মাণ করে জলাধার তৈরি করা হয়েছে। এই জলাধারগুলি থেকে অনেক সেচখাল কেটে পাকিস্তানের অধিকাংশ কৃষিজমিতে জলসেচ করা হয়। তাই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ার সত্ত্বেও পাকিস্তান কৃষিকাজে বেশ উন্নত।

5.পাকিস্তানের জলসেচ ব্যবস্থা সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

উঃ
পাকিস্তানের জলসেচ ব্যবস্থা

পাকিস্তানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম, তাই কৃষিকাজ সম্পূর্ণরূপে সেচব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। উন্নত সেচব্যবস্থার সাহায্যে এখানকার মরুপ্রায় অঞ্চলকে সুফলা ও শস্যশ্যামলা করে তোলা হয়েছে। এইজন্য পাকিস্তানকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জলসেচ কার্যকরী দেশ বলে আখ্যায়িত করা হয়। পাকিস্তানে যেসব সেচ পদ্ধতিগুলি প্রচলিত সেগুলি হল

1. খালসেচ :
জলসেচের জন্য সিন্ধু ও তার বিভিন্ন উপনদীর ওপর অনেক বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। যেমন—সুক্কুর বাঁধ, গুলাম মহম্মদ বাঁধ, জিন্না বাঁধ, মঙ্গলা বাঁধ প্রভৃতি। এইসব বাঁধের পেছনে নির্মিত জলাধার থেকে খালের মাধ্যমে সেচ কাজ করা হয়। দেশের বেশিরভাগ অংশেই জলসেচের মাধ্যমে কৃষিকাজ করা হয়। পাকিস্তানের কতকগুলি উল্লেখযোগ্য খাল হল – নিম্নবারি দোয়াব খাল, উচ্চ ও নিম্ন চন্দ্রভাগা খাল, উচ্চ ও নিম্ন বিতস্তা খাল, সিন্ধু খাল প্রভৃতি।

2. ক্যারেজ প্রথা : দেশের পশ্চিমে বালুচিস্তানের শুষ্ক অঞ্চলে সেচখালের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে জল নিয়ে যাওয়ার সময় অত্যধিক তাপে জল শুকিয়ে যায়। এই অসুবিধা দূর করার জন্য মাটির নীচে সুড়ঙ্গ কেটে কৃষিক্ষেত্রে জল নিয়ে যাওয়া হয়। জল নিয়ে যাওয়ার এই প্রথার নাম ক্যারেজ প্রথা।

6. ভারত থেকে প্রতিবেশী দেশগুলিতে যেসব দ্রব্যসামগ্রী রপ্তানি এবং ভারতের প্রয়োজনে প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে যেসব দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করা হয় তার একটি তালিকা প্রস্তুত করো।

উঃ
বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশ এবং ভারতের মধ্যে রপ্তানি ও আমদানিকৃত দ্রব্যগুলি হল—

নেপাল一

ভারতের রপ্তানি দ্রব্য: পেট্রোপণ্য, গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, তুলা, রাসায়নিক সার, পোশাক প্রভৃতি দ্রব্য ভারত রপ্তানি করে। 

ভারতের আমদানি দ্রব্য : কাঁচা পাট, তৈলবীজ, ডাল, চামড়া, কার্পেট প্রভৃতি দ্রব্য ভারত আমদানি করে।

ভুটান一

ভারতের রপ্তানি দ্রব্য: কাগজ, ওষুধ, কয়লা, ইস্পাত, চিনি, নুন, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি দ্রব্য ভারত রপ্তানি করে। 

ভারতের আমদানি দ্রব্য: বড়ো এলাচ, বিভিন্ন ফল, পশম ও পশমজাত দ্রব্য, জ্যাম, জেলি, পশম ও পশমজাত দ্রব্য প্রভৃতি দ্রব্য ভারত আমদানি করে।

বাংলাদেশ一

ভারতের রপ্তানি দ্রব্য:
মোটরগাড়ি, ওষুধ, চিনি, যন্ত্রপাতি, কয়লা, ইস্পাত, ইমারতি দ্রব্য, শস্যবীজ প্রভৃতি দ্রব্য ভারত রপ্তানি করে। 

ভারতের আমদানি দ্রব্য: কাঁচা পাট, কাগজ, তামাক, সুপারি, চামড়া, ইলিশ মাছ, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি দ্রব্য ভারত আমদানি করে। 

মায়ানমার一

ভারতের রপ্তানি দ্রব্য: ইস্পাত, কয়লা, পাটজাত দ্রব্য, সুতিবস্ত্র, রাসায়নিক দ্রব্য, পরিবহণের সরঞ্জাম প্রভৃতি দ্রব্য ভারত রপ্তানি করে। 

ভারতের আমদানি দ্রব্য: সেগুন ও শাল কাঠ, রুপো, টিন, টাংস্টেন, মূল্যবান পাথর প্রভৃতি দ্রব্য ভারত আমদানি করে। 

শ্রীলঙ্কা一

ভারতের রপ্তানি দ্রব্য : চিনি, ইস্পাত, কয়লা, পাটজাত দ্রব্য, বস্ত্র, ওষুধ প্রভৃতি দ্রব্য ভারত রপ্তানি করে। 

ভারতের আমদানি দ্রব্য: লবঙ্গ, দারুচিনি, গ্রাফাইট, চামড়া, নারকেলজাত দ্রব্য, মূল্যবান রত্ন প্রভৃতি দ্রব্য ভারত আমদানি করে।

পাকিস্তান一


ভারতের রপ্তানি দ্রব্য : ইস্পাত, কয়লা, আকরিক লোহা, চা, ওষুধ, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি দ্রব্য ভারত রপ্তানি করে। 

ভারতের আমদানি দ্রব্য: উন্নত কার্পাস, শুকনো ফল, কার্পেট, চামড়া প্রভৃতি দ্রব্য ভারত আমদানি করে।

Post a Comment

0 Comments