দক্ষিণ আমেরিকা
অধ্যায়ভিত্তিক সংজ্ঞা:
1. লাতিন আমেরিকা: দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা, মেক্সিকো এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ একসঙ্গে লাতিন আমেরিকা নামে পরিচিত।
2. আন্দিজ : আন্দিজ পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা। এই পর্বতমালা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিমে অবস্থিত এবং এই পর্বতমালা উত্তরে ক্যারিবিয়ান সাগর থেকে দক্ষিণে হর্ন অন্তরীপ পর্যন্ত বিস্তৃত।
3. অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাত: দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর উত্তর দিকে গায়ানা উচ্চভূমি অবস্থিত। আর এই উচ্চভূমিতেই সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত অ্যাঞ্জেল।
4. আমাজন : দৈর্ঘ্যের বিচারে (6437 কিমি) আমাজন পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। নদী অববাহিকার আয়তন ও জলপ্রবাহের দিক থেকে এটি পৃথিবীর বৃহত্তম নদী।
5. চিরগোধূলি অঞ্চল : এই মহাদেশের নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে রোজউড, আয়রন উড, ব্রাজিল নাট প্রভৃতি গাছ জন্মায়। গাছগুলি খুব ঘনসন্নিবিষ্টভাবে জন্মায় বলে সূর্যালোক প্রায় প্রবেশ করে না। তাই এই অঞ্চলকে চিরগোধূলি অঞ্চল বলে।
6. সেলভা অরণ্য: আমাজন নদীর অববাহিকার বিশাল অঞ্চলজুড়ে পৃথিবীর বৃহত্তম চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমির সৃষ্টি হয়েছে, যা সেলভা অরণ্য নামে পরিচিত।
7. চাঁদোয়া: সেলভা অরণ্যের গাছগুলি খুব ঘনসন্নিবিষ্টভাবে জন্মায়। এই অরণ্যের উপরের অংশ পাতা দিয়ে চাঁদোয়ার মতো ঢাকা থাকায় সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। তাই এই অরণ্যের তলদেশে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
৪. পৃথিবীর ফুসফুস : সেলভা অরণ্যকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়। এই অরণ্য, পৃথিবীর প্রায় 20 শতাংশ অক্সিজেনের জোগান দেয়।
9. পম্পাস: ‘পম্পাস' শব্দটি একটি স্পেনীয় শব্দ, যার অর্থ বিস্তীর্ণ সমতলক্ষেত্র।
10. এস্টেনশিয়া: দক্ষিণ আমেরিকার পম্পাস অঞ্চলের পশুচারণভূমি এস্টেনশিয়া নামে পরিচিত।
11. করডোবা : আন্দিজ পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত করডোবা অঞ্চল দুগ্ধ শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানে প্রধানত দুগ্ধ প্রদানকারী গোরু প্রতিপালন করা হয়।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি: প্রতিটি প্রশ্নের মান 5
1. দক্ষিণ আমেরিকার ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ভূপ্রকৃতি
উঃ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশকে ভূপ্রাকৃতিক গঠনের বৈচিত্র্যের ওপর ভিত্তি করে চারটি ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়, যথা—
1. পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল:অবস্থান: দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তর দিকে ক্যারিবিয়ান সাগর থেকে শুরু করে একেবারে দক্ষিণ দিকে হর্ন অন্তরীপ পর্যন্ত এই পার্বত্য অঞ্চলটি বিস্তৃত। এই পার্বত্য অঞ্চলেই পৃথিবীর দীর্ঘতম আন্দিজ পর্বতমালা অবস্থিত। বৈশিষ্ট্য: এই পার্বত্য অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—[i] সর্বোচ্চ শৃঙ্গ: মাউন্ট অ্যাকোনকাগুয়া (6960 মিটার) আন্দিজ পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। উচ্চতার বিচারে এটি পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশ্রেণি। এটি একটি নবীন ভঙ্গিল পর্বত। [ii] পর্বতবেষ্টিত মালভূমি: বেশ কিছু পর্বতবেষ্টিত মালভূমি এই পার্বত্য অঞ্চলে ত, যেমন— বলিভিয়া, পেরু, টিটিকাকা, ইকুয়েডর প্রভৃতি। এদের মধ্যে টিটিকাকা মালভূমিটি উচ্চতম। এই মালভূমিতেই পৃথিবীর টিটিকাকা হ্রদ অবস্থিত। [iii] আগ্নেয়গিরি: চিম্বোরাজো, কটোপ্যাক্সি প্রভৃতি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এই পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত।
2. পশ্চিমের সংকীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল: অবস্থানঃ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম দিকে অবস্থিত প্রশান্ত মহাসাগর এবং আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যভাগে উপকূলীয় অঞ্চলটি আছে। বৈশিষ্ট্যঃ [i] মরুভূমি: এই সংকীর্ণ মধ্যবর্তী অংশে প্রায় 1100 কিমি বিস্তৃত আটাকামা মরুভূমি অবস্থিত। [ii] শুষ্ক ও খরাপ্রবণ অঞ্চলঃ আটাকামা মরুভূমি পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক ও খরাপ্রবণ অঞ্চল।
3. পূর্বের উচ্চভূমি অঞ্চল: অবস্থান: দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব দিকে দুটি উচ্চভূমি অঞ্চল আছে। দুটি উচ্চভূমিই বহু প্রাচীন ভূখণ্ডের অংশ। এগুলি ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি ও উত্তর আমেরিকার কানাডীয় শিল্ড অঞ্চলের সমসাময়িক। এই দুটি উচ্চভূমি আমাজন নদী অববাহিকা দ্বারা পৃথক। এই দুটি উচ্চভূমি হল—
[i] গায়ানা উচ্চভূমি: আমাজন নদীর উত্তর দিকে অবস্থিত মালভূমিকে গায়ানা উচ্চভূমি বলা হয়। এর গড় উচ্চতা প্রায় ৪০০ মিটার। ভেনেজুয়েলা, সুরিনাম, গায়ানা, ফেঞ্চ গায়ানা প্রভৃতি দেশ এই উচ্চভূমিতে অবস্থিত। পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত অ্যাঞ্জেল এই উচ্চভূমিতে সৃষ্টি হয়েছে। এর সর্বোচ্চ অংশটি হল রোরোইমা (2769 মিটার)।
[ii] ব্রাজিল উচ্চভূমি: আমাজন নদীর দক্ষিণ দিকে অবস্থিত উচ্চভূমির নাম ব্রাজিল উচ্চভূমি। এই উচ্চভূমির গড় উচ্চতা 1000 মিটার। এই উচ্চভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্খটি হল পিকো-ডো-বানডাইরা (2892 মিটার)। ব্রাজিল উচ্চভূমি এবং আন্দিজ পর্বতের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত নীচু ম্যাটোগ্রাসো মালভূমি অবস্থিত। এই মালভূমি আমাজন ও লা-প্লাটা নদীর জলবিভাজিকা হিসেবে অবস্থান করছে।
4. মধ্যভাগের বিশাল সমভূমি অঞ্চল: অবস্থান: পশ্চিমের আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চল এবং পূর্বের উচ্চভূমির মধ্যবর্তী অংশে বিশালাকার সমভূমি অবস্থিত অবস্থিত। বিভাগ: আমাজন, ওরিনোকো, লা-প্লাটা এবং এদের উপনদী শাখানদী দ্বারা সমভূমিটি গঠিত। এই সমভূমি অঞ্চলকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—[i] ল্যানোস সমভূমি: ওরিনোকো নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। [ii] সেলভা সমভূমি: আমাজন নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। [iii] গ্রানচাকো সমভূমি: পারানা-প্যারাগুয়ে নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। [iv] পম্পাস সমভূমি: লা-প্লাটা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। এই সমভূমির মধ্যে সেলভা বৃহত্তম এবং এখানে গভীর বনভূমি সৃষ্টি পার্বত্য হয়েছে। অন্যদিকে, ল্যানোস ও পম্পাস হল তৃণভূমি অঞ্চল।
সাইটে সমস্যার জন্য পরবর্তী প্রশ্নোত্তর আপাতত বাতিল করা হয়েছে। আমরা শীঘ্রই প্রশ্নোত্তরগুলি প্রদান করবো।
0 Comments