Recents in Beach

অস্থিত পৃথিবী অষ্টম শ্রেণী সহায়িকা প্রশ্ন ও উত্তর

অস্থিত পৃথিবী 

অধ্যায়ভিত্তিক  সংজ্ঞা :

1. ভূপৃষ্ঠের চলন বা সরণ: যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীতে কোথাও না কোথাও প্রতিনিয়ত ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, ধস, পর্বত গঠন, হিমানী সম্প্রপাত প্রভৃতি ঘটনা ঘটে চলেছে, সেই প্রক্রিয়াকে ভূপৃষ্ঠের চলন বা সরণ বলে।

2. পাতসংথান তত্বের সূচনা: মহীসঞ্চরণ তত্ত্বের ধারণার ওপর নির্ভর করে 1960-এর দশকে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার ঘটে, যা প্রায় সমস্তরকম ভূপ্রাকৃতিক বিষয়ের বিজ্ঞানসম্মতভাবে স্পষ্ট ও সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে পারে। এই তত্ত্বই হল পাতসংস্থান তত্ত্ব (Plate Tectonic Theory)

3. অপসারী পাত সীমানা: যে পাত সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পর দূরে সরে যায়, সেই বিপরীতমুখী পাত সীমানাকে অপসারী পাত সীমানা বলে।

4. অভিসারী পাত সীমানা: যে পাত সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়, সেই পরস্পরমুখী পাত সীমানাকে অভিসারী পাত সীমানা বলে।

5. নিরপেক্ষ পাত সীমানা: যে পাত সীমানায় দুটি পাত পরস্পর ঘর্ষণ করে পাশাপাশি অগ্রসর হয়, তাকে নিরপেক্ষ পাত সীমানা বলে।

6. অগ্ন্যুদ্গম  (Volcanism): ভূ-অভ্যন্তরের গলিত সান্দ্র ম্যাগমা, গ্যাস, জলীয় বাষ্প কোনাে ফাটল বা গহ্বরের মধ্য দিয়ে বিস্ফোরণ-সহ প্রচণ্ড জোরে অথবা ধীরে ধীরে শান্তভাবে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া হল অগ্ন্যুদ্গম ।

7. সঞ্চয়জাত বা আগ্নেয় পর্বত (Volcanic Mountain):  অগ্নদগমের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা পদার্থগুলি গহ্বর বা ফাটলের চারপাশে জমা হয়ে যে শঙ্কু আকৃতির পর্বত গঠিত হয়, তাকে আগ্নেয় পর্বত বলে।

৪. সক্রিয় আগ্নেয়গিরি : যেসব আগ্নেয়গিরিগুলি সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে অবিরাম বা সবিরাম ভাবে অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়ে চলেছে, তাদের সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বলে।

9. সুপ্ত আগ্নেয়গিরি : যেসব আগ্নেয়গিরি একবার অগ্ন্যুৎপাতের পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় থাকে, তাদের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলে। 10. মৃত আগ্নেয়গিরি : যেসব আগ্নেয়গিরি থেকে অতি প্রাচীনকালে অগ্ন্যুৎপাত ঘটলেও ভবিষ্যতে অগ্ন্যুৎপাত ঘটার সম্ভাবনা প্রায় নেই, তাদের মৃত আগ্নেয়গিরি বলে।

11. ভূমিকম্পের কেন্দ্র (Focus): ভূপৃষ্ঠের নীচে ভূ-অভ্যন্তরে যে স্থান থেকে ভূমিকম্পের উদ্ভব হয়,তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে। 

12. ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র (Epicentre): ভূমিকম্পের কেন্দ্রের ঠিক উল্লম্ব দিকে ভূপৃষ্ঠের যে বিন্দুতে প্রথম কম্পন পৌঁছােয়, তা হল ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র।

13. ভূকম্পন তরঙ্গ (Seismic Wave): ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট তরঙ্গগুলিকে ভূকম্পন তরঙ্গ বলে।

14. প্রশান্ত মহাসাগরীয় অগ্নিবলয় (Pacific Ring of Fire): প্রশান্ত মহাসাগরের দু-দিকের উপকূলের আগ্নেয়গিরির বলয়কে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অগ্নিবলয় বলে।

15. মহীসঞ্চরণ তত্ত্ব : ভূপৃষ্ঠের চলন বা সরণ সংক্রান্ত যে ধারণা আলফ্রেড ওয়েগনার দিয়েছিলেন তাই হল মহীসঞ্চরণ তত্ত্ব (Continental Drift)

16. বিদার অগ্ন্যুদ্গম : অপসারী ও নিরপেক্ষ পাত সীমানায় বিস্ফোরণ ছাড়া শান্তভাবে অগ্নদগম ঘটে। এই প্রকারকে বিদার অগ্ন্যুদ্গম  বলে।

17. প্রাথমিক তর: কঠিন, তরল, গ্যাসীয় পদার্থের মধ্য দিয়ে কুম সংকোচন ও প্রসারণ প্রক্রিয়ায় যে তরঙ্গ সবথেকে দ্রুত (6 কিমি/সে) ভূপৃষ্ঠে এসে পৌছােয়, সেই তরঙ্গই হল প্রাথমিক তরঙ্গ (Primary Wave)।

18. দ্বিতীয় পর্যায়ের তরঙ্গ: প্রাথমিক তরঙ্গের পর যে তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছােয় (3-5 কিমি/সে), সেই তরঙ্গই হল দ্বিতীয় পর্যায়ের তরঙ্গ (Secondary wave)।

19. পৃষ্ঠ তরঙ্গ: ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠ বরাবর যে তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে (3-4 কিমি/সে), সেই তরঙ্গই হল পৃষ্ঠ তরঙ্গ। পৃষ্ঠ তরঙ্গ দুই ধরনের --- (১) লাভ তরঙ্গ এবং (২) রেলে তরঙ্গ

20. মধ্য মহাদেশীয় বলয়: মেক্সিকো থেকে শুরু করে আটলান্টিক মহাসাগর, ভূমধ্যসাগর, আল্পস, ককেশাশ, হিমালয় পর্বত হয়ে যে বিস্তীর্ণ বলয় অবস্থিত, তাই হল মধ্য পৃথিবীর পার্বত্য বলয় বা মধ্য মহাদেশীয় বলয়।

21. সুনামি :
সমুদ্র তলদেশে ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়ে প্রবল শক্তিতে উপকূল অঞ্চলে আছড়ে পড়লে তাকে সুনামি বলে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি। প্রতিটি প্রশ্নের ম্যান ৫

১.চিত্রসহ বিভিন্ন প্রকার পাত সীমানার পরিচয় দাও।

পাত সীমানাকে তিনটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়—

1. অপসারী বা গঠনকারী পাত সীমানা : যে সীমানা বরাবর দুটি ভূত্বকীয় পাত পরস্পর থেকে বিপরীত দিকে সরে যায়, তাকে অপসারী পাত সীমানা বা গঠনকারী পাত সীমানা বলে।

বৈশিষ্ট্য: এই প্রকার পাত সীমানার দুটি বৈশিষ্ট্য হল— (1) ভূমিরূপ: এই ধরনের পাত সীমানায় মাঝের ফাটল বরাবর ম্যাগমা বাইরে বেরিয়ে আসে এবং শীতল ও কঠিন হয়ে মধ্য-সামুদ্রিক শৈলশিরা তৈরি করে। (2) এই ধরনের পাত সীমানায় ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত প্রভৃতি ঘটে। উদাহরণ: আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা বরাবর এই পাত দেখা যায়।

2. অভিসারী বা বিনাশকারী পাত সীমানা : যে সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পর মুখােমুখি এগিয়ে আসে, তাকে অভিসারী পাত সীমানা বলে।

বৈশিষ্ট্য: এই সীমানার বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) ভূমিরূপ: এক্ষেত্রে দুটি পাত পরস্পরের দিকে এগিয়ে এলে তাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত ভারী পাতটি হালকা পাতের নীচে প্রবেশ  করে। ফলে সেখানে দ্বীপ, দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি সৃষ্টি হয়। আবার দুটি পাতের মধ্যে সংঘর্ষ হলে তাদের মধ্যবর্তী পলিরাশিতে ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি সৃষ্টি হয়।  (2) পাতের বিনাশ: এই প্রকার পাত সীমানায় ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত ঘটে এবং ভূত্বকীয় পাতের বিনাশ হয়। উদাহরণ: ইউরেশীয় ও ভারতীয় এই দুটি পরম্পরমুখী পাত সীমানা অভিসারী পাত সীমানার অন্তর্গত।

3. নিরপেক্ষ পাত সীমানা: যে ধরনের পাত সীমানায় দুটি ভূত্বকীয় পাত পরস্পর ঘর্ষণ করে পাশাপাশি অগ্রসর হয়, তাকেই নিরপেক্ষ সাত সীমানা বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য:  (1) এই ধরনের পাত সীমানায় ভূত্বকের সৃষ্টি বা ধ্বংস। কোনােটিই হয় না বলে এইরূপ নামকরণ হয়েছে। (2) তবে ভূমিকম্প এবং ট্রান্সফর্ম চ্যুতি লক্ষ করা যায়। উদাহরণ: ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত সান নিরপেক্ষ পাত সীমানা আন্দ্রিজ চ্যুতি এই প্রকার পাত সীমানার উদাহরণ। 


২. বিনাশকারী, গঠনকারী ও নিরপেক্ষ পাত সীমানার বৈশিষ্ট্য লেখাে।

বিনাশকারী পাত সীমানার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

1. পারস্পরিক সংঘর্ষ : বিনাশকারী পাত সীমানায় দুটি পাত পরস্পরের দিকে এগিয়ে এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

2. ভূত্বকের বিনাশ : অপেক্ষাকৃত হালকা পাতটির নীচে ভারী পাতের নিমজ্জন ঘটে বলে ভূত্বকের বিনাশ ঘটে।

3. ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত : এই প্রকার পাত সীমানা বরাবর প্রায়শই ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।

4. দ্বীপপুঞ্জের সৃষ্টি : দুটি সামুদ্রিক পাতের সংঘর্ষের ফলে তাদের ওপরের পলি ভাজ খেয়ে দ্বীপপুঞ্জের সৃষ্টি হয়।

5. ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি : মহাদেশীয়-মহাদেশীয় বা মহাদেশীয় মহাসাগরীয় পাতের সংঘর্ষের ফলে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হয়। 

গঠনকারী পাত সীমানার বৈশিষ্ট্যগুলি হল —

1. বিপরীতমুখী চলন: গঠনকারী পাত সীমানায় দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়।

2. ভূত্বক গঠন : দুটি পাত পরপর দূরে সরে যাওয়ার ফলে মধ্যবর্তী অংশে যে ফাটল সৃষ্টি হয়, তা দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরভাগ থেকে ম্যাগমা বেরিয়ে এসে শীতল ও জমাটবদ্ধ হয়ে নতুন ভূত্বক গঠন করে।

3. মধ্য-সামুদ্রিক শৈলশিরা গঠন: মহাসাগরের তলদেশে দুটি পাত পরস্পর বিপরীত দিকে সরে গিয়ে মধ্যসামুদ্রিক শৈলশিরা গঠন

নিরপেক্ষ পাত সীমানার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

1. পাশাপাশি চলন: নিরপেক্ষ পাত সীমানায় দুটি পাত পরস্পর ঘর্ষণ করে পাশাপাশি অগ্রসর হয়।

2. ভূত্বকের সৃষ্টি ধ্বংস: এই প্রকার পাত সীমানায় ভূত্বকের সৃষ্টি বা ধ্বংস কিছুই হয় না।

3. চ্যুতির সৃষ্টি : এই প্রকার পাত সীমানায় অতি দীর্ঘ চ্যুতি সৃষ্টি হয়।

৩.বিভিন্ন প্রকার পাত সীমানায় গড়ে ওঠা ভূমিরূপের বিবরণ দাও। অথবা  পাতের চলনের ফলে কীভাবে বিভিন্ন ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় তা ব্যাখ্যা করাে।  

ঊঃ অপসারী পাত সীমানায় গড়ে ওঠা ভূমিরূপ: অপসারী পাত সীমানায় দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে যে ফাঁকের  সৃষ্টি হয়, তা দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরভাগ থেকে ম্যাগমা বেরিয়ে আসে। এভাবে মহাসাগরের তলদেশে মধ্য-সামুদ্রিক শৈলশিরা সৃষ্টি হয়। যেমন—মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা।

অভিসারী পাত সীমানায় গড়ে ওঠা ভূমিরূপ:
অভিসারী পাত সীমানায় দুটি পাত পরস্পরের দিকে এগিয়ে এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এর ফলে অপেক্ষাকৃত ভারী পাতটি হালকা পাতের তলায় প্রবেশ করে। যদি দুটি মহাসাগরীয় পাত পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তবে গভীর সমুদ্রখাত, বৃত্তচাপ আকৃতির দ্বীপপুঞ্জ তৈরি করে। মহাদেশীয় পাতের সঙ্গে মহাসাগরীয় পাতের সংঘর্ষে মহাসাগরীয় পাতের উপর সঞ্চিত পলিতে ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়। যেমন—আন্দিজ পর্বত। আবার দুটি মহাদেশীয় পাত পরস্পরের দিকে এগিয়ে আসলে তাদের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ সমুদ্রের পলিরাশিতে ভাজ পড়ে ও ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হতে পারে। যেমন—হিমালয় পর্বত। অভিসারী পাত সীমানা বরাবর অনেক আগ্নেয়গিরিও দেখা যায়।

নিরপেক্ষপাত সীমানায় গঠিত ভূমিরূপ: নিরপেক্ষ পাত সীমানায় দুটি পাত পরস্পরকে ঘর্ষণ করে পাশাপাশি অগ্রসর হয়। এজন্য কোনােরকম ভূমিরূপ গঠিত হয় না। তবে অতি দীর্ঘ চ্যুতি সৃষ্টি করে। যেমন- ক্যালিফোর্নিয়ার সান আজি চুতি। 

৪.পৃথিবীর অধিকাংশ ভঙ্গিল পর্বত কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা ব্যাখ্যা করাে। 

উঃ বর্তমানে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির কারণ হিসেবে পাতসংস্থান তত্ত্বকেই গ্রহণযােগ্য মনে করা হয়েছে, যেমন—

1. মহাদেশীয়-মহাদেশীয় অভিমুখী পাত সঞ্চালন : এক্ষেত্রে দুটি মহাদেশীয় পাত পরস্পর মুখােমুখি অগ্রসর হয় এবং তাদের মধ্যে অবস্থান করে অগভীর এবং অপ্রশস্ত সাগর। পাতগুলি অগ্রসর হওয়ার ফলে দুটি পাতের মধ্যবর্তী অগভীর সাগরে সঞ্চিত পলিরাশি ভাজপ্রাপ্ত হয়ে পর্বত গঠন করে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, উত্তরের ইউরেশীয় পাত এবং দক্ষিণে ভারতীয় পাত পরস্পর মুখােমুখি চলনের সময় ভারতীয় পাতটি ইউরেশীয় পাতের সঙ্গে ধাক্কা খায় ও ভারতীয় পাতটি ইউরেশীয় পাতের নীচে প্রবেশ করে। ফলে, এই দুটি পাতের সংযােগস্থলে টেথিস নামক এক অগভীর সমুদ্রের সঞ্চিত পলি ভাজপ্রাপ্ত হয়ে হিমালয় পর্বত গঠন করে।

2. মহাসাগরীয়-মহাদেশীয় অভিমুখী সঞ্চালন : মহাসাগরীয়-মহাদেশীয় পাত সীমানা বরাবর। পাতের অভিমুখী চলনের ফলে ভারী মহাসাগরীয় পাত হালকা মহাদেশীয় পাতের নীচে চলে যায়। ফলস্বরূপ মহাসাগরীয় পাতের ওপর সতি পলিরাশিতে প্রবল পার্শ্বচাপ পড়ে ও ভাঁজের সৃষ্টি হয়। আমেরিকার পশ্চিমভাগের রকি ও আন্দিজ পর্বতমালা এভাবেই তৈরি।

৫. পার্থক্য লেখো : অপসারী, অভিসারী এবং নিরপেক্ষ পাঠসীমানা।

৬. আগ্নেয় পর্বত কাকে বলে? আগ্নেয় পর্বত কীভাবে সৃষ্টি হয় তা চিত্রসহ ব্যাখ্যা করাে। 

উঃ ভূত্বকের দুর্বল অংশ বা ফাটল বা ছিদ্র দিয়ে যখন ভূ-অভ্যন্তরের গলিত, সান্দ্র ম্যাগমা, গ্যাস, ছাই, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি প্রচণ্ড বিস্ফোরণসহ জোরে বা শান্তভাবে বাইরে বেরিয়ে আসে, তখন সেই প্রক্রিয়াকে অগ্ন্যুৎপাত বলে। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে আগ্নেয় পদার্থসমূহ ফাটলের চারিদিকে সতি হয়ে যে পর্বত গঠিত হয়, তাকে আগ্নেয় পর্বত বলে।
 আগ্নেয় পর্বত সৃষ্টির পদ্ধতিগুলি হল— 

1. অভিসারী পাত সীমানায় সৃষ্ট আগ্নেয় পর্বত: সীমানা বরাবর দুটি পাতের মধ্যে সংঘর্ষ হলে পাত সীমানায় বিস্ফোরণসহ অগ্ন্যুগ্ম হয়। এর ফলে উৎক্ষিপ্ত লাভা ও পদার্থসমূহ ফাটল বা গহ্বরের চারিদিকে সঞ্জিত হয়ে শঙ্কু আকৃতির পর্বতের আকার ধারণ করে। সঞ্জয়ের ফলে সৃষ্টি হওয়ায় এর আর-এক নাম সঞ্জয়জাত পর্বত। 

2. অপসারী পাত সীমানায় সৃষ্ট আগ্নেয় পর্বত : সমুদ্র তলদেশে অপসারী পাত সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে গেলে যে ফাটল সৃষ্টি হয়, সেই ফাটল দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরের ম্যাগমা ক্রমাগত বেরিয়ে আসে। এই ম্যাগমা থেকেই পরে নতুন ভূত্বক এবং মধ্য-সামুদ্রিক শৈলশিরা গঠিত হয়।

3. তপ্তবিন্দ: কখনাে কখনাে পাতের মধ্যস্থলে তপ্তবিন্দু (hotspot) থেকে তৈরি হওয়া উর্ধ্বমুখী পরিচলন স্রোতের সাহায্যে উঠে আসা ম্যাগমা আগ্নেয় পর্বত তৈরি করে। উদাহরণ: জাপানের মাউন্ট ফুজি, ইটালির ভিসুভিয়াস, ভারতের ব্যারেন প্রভৃতি হল আগ্নেয় পর্বত।

৭. অগ্ন্যুদ্গম কারণ কী? অথবা, অগ্নুদ্গম  কীভাবে হয়?

উঃ বিভিন্ন কারণে অগ্ন্যুদগম হতে পারে। এগুলি হল—

1. ভূপৃষ্ঠে দুর্বল ফাটলের অবস্থান : ভূত্বক গঠনকালে ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূগর্ভ পর্যন্ত কোথাও কোথাও দুর্বল ফাটল বা ছিদ্রপথও অবস্থান করলে এইসব দুর্বল স্থানগুলি অগ্নদগমের উৎসরূপে কাজ করে। 

2. সান্দ্র শিলার উপস্থিতি : ভূ-অভ্যন্তরে গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিলাস্তরে চাপ ও উয়তা বাড়তে থাকে। কিন্তু গুরুমণ্ডলে 2000° সে উয়তায় ওপরের স্তরের প্রবল চাপে শিলা গলে যায় না, বরং পিচ্ছিল হয়ে প্লাস্টিকের মতাে প্রবাহিত হয়। এর কারণ হল চাপ বাড়ার ফলে শিলার গলনাঙ্ক বেড়ে যাওয়া। কখনাে কখনাে বহিঃগুরুমণ্ডলের কোনাে কোনাে অংশের শিলা গলে গেলে এই গলিত ম্যাগমার ঘনত্ব পার্শ্ববর্তী অর্ধগলিত শিলার তুলনায় কম হয়ে যায়। ফলস্বরূপ এই ম্যাগমা ওপরের দিকে উঠতে শুরু করে। ম্যাগমা যত ওপরে ওঠে, ততই তার চাপ ও গলনাঙ্ক কমে যায়। এই তরল ম্যাগমার জলীয় অংশ গ্যাস ও জলীয় বাষ্পে রূপান্তরিত হয় ও প্রবল চাপে ভূপৃষ্ঠের কোনাে দুর্বল ফাটল দিয়ে উৎক্ষিপ্ত হয়। বড়াে এবং 20 টি মাঝারি ও

3. পাতসংস্থান : পৃথিবীতে মােট 6 টি ছােটো পাত রয়েছে। অ্যাথেনােস্ফিয়ারের পরিচলন স্রোতের প্রভাবে এই পাতগুলি খুব ধীর গতিতে সঞরণ করে। এর ফলে পাতগুলি তাদের সীমানা বরাবর কখনও একে অপরের মুখােমুখি বা বিপরীত দিকে বা পাশাপাশি ঘর্ষণ করে অগ্রসর হলে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।

৮. অগ্ন্যুৎপাত ঘটলে পৃথিবীপৃষ্ঠে কী কী ধরনের প্রভাব পড়ে? 

উঃ অগ্ন্যুৎপাত ঘটলে পৃথিবীপৃষ্ঠে দুই ধরনের প্রভাব পড়তে পারে— 

1. ধ্বংসাত্মক প্রভাব: অগ্ন্যুৎপাতের ধ্বংসাত্মক প্রভাবগুলি হল—  

1. ভূমিকম্প: অগ্ন্যুৎপাত ঘটলে নিকটবর্তী অঞ্চলসমূহে ভূমিকম্প ঘটবে এবং এর ফলে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও অন্যান্য পরিকাঠামাে ধ্বংস হতে পারে।

2. সুনামি: সমুদ্রের তলদেশে প্রবল অগ্ন্যুৎপাত ঘটলে সুনামি হতে পারে। প্রচণ্ড তাপে সমুদ্রের জল গরম হয়ে প্রচুর সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষতি করে। 

3. দূষণ: অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস বাম্প, ছাই, ভস্ম প্রভৃতি বাতাসে মিশে বায়ুদূষণ ঘটায়।

4. দাবানল ও জনজীবনে প্রভাব: আগ্নেয় লাভা বনভূমির মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হলে দাবানল সৃষ্টি হতে পারে। আবার অনেক সময় সুপ্ত আগ্নেয়গিরি হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠে পার্শ্ববর্তী শহর, জনজীবন সব ধ্বংস করে দেয়।

2. গঠনমূলক প্রভাব: অগ্ন্যুৎপাতের গঠনমূলক প্রভাবগুলি হল— 

1. ভূত্বক গঠন: উৎক্ষিপ্ত লাভা, ছাই, আগ্নেয় পদার্থ স্তরে স্তরে জমে শীতল ও কঠিন হয়ে ভূত্বকের সৃষ্টি হয়।

2.জলভাগের সৃষ্টি: সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে সাগর-মহাসাগরের জলরাশির সৃষ্টি হয়েছে।

3.মাটি সৃষ্টি: লাভাসঞ্চিত শিলা থেকে কালােমাটি তৈরি হয়। এই মাটি কৃষিকাজের উপযুক্ত।

4 খনিজ পদার্থ: অগ্ন্যুৎপাতের কারণেই বহু মূল্যবান ধাতু ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে আসে।

5.ভূমিরূপগঠন: অগ্ন্যুৎপাতের ফলে লাভা নির্গত হয়ে এবং ভূপৃষ্ঠে তা সঞ্জিত হয়ে মালভূমি, এমনকি পর্বতও গঠন করে।

6. দ্বীপ সৃষ্টি: আগ্নেয় লাভা সমুদ্রবক্ষে জমা হয়ে দ্বীপ বা দ্বীপপুঞ্জ তৈরি করতে পারে। যেমন-ব্যারেন দ্বীপ।

৯. ভূমিকম্পের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দাও। অথবা, ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক কারণ ব্যাখ্যা করাে।

উঃ ভূমিকম্পের কারণ

পৃথিবীর স্থিতিস্থাপক অভ্যন্তরে কোনাে সঞ্জিত শক্তি হঠাৎ মুক্ত হয়ে ভূত্বক কেঁপে উঠলে তাকে ভূমিকম্প বলে। ভূমিকম্পের জন্য দায়ী প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক কারণগুলি সম্পর্কে আলােচনা করা হল—

প্রাকৃতিক কারণ

ভূমিকম্পের জন্য দায়ী প্রাকৃতিক কারণগুলি হল— 

1. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত : আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময় গ্যাস, জলীয় বাষ্প ও উত্তপ্ত তরল পদার্থ প্রচণ্ড জোরে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসলে ভূমিকম্প হতে পারে। 

2. ধস: বৃষ্টিপাতের ফলে পার্বত্য অঞ্চলে ধস নামলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

3. পাতের সঞ্চরণ: পাতসংস্থান তত্ত্ব অনুযায়ী দুটি পাত পরস্পরের অভিমুখে অগ্রসর হলে বা পরস্পর থেকে দূরে সরে গেলে বা পাশাপাশি ঘর্ষণ করে অগ্রসর হলে পাতের সংযােগরেখা বরাবর শিলাচ্যুতি ঘটে এবং ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়।

4. হিমানী সম্প্রপাত : পার্বত্য অঞ্চলে বিশাল বরফের স্তৃপ হিমানী সম্প্রপাতরূপে ধসে পড়লে ভূমিকম্প হয়।

5. ভঙ্গিল পর্বতের উত্থান : ভূ-আলােড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বতের উত্থানের সময় প্রবল ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

6. উল্কাপাত : মহাকাশ থেকে খসে পড়া উল্কার আঘাতেও ভূমিকম্প হয়। যেমন—আমেরিকার অ্যারিজোনায় উল্কাপাতের ফলে একটি বিরাট গহ্বরের সৃষ্টি হয়েছিল, যাকে শয়তানের খাদ’নাম দেওয়া হয়। 

অপ্রাকৃতিক বা কৃত্রিম কারণ

জুলাধারের চাপ, ভূগর্ভে পারমাণবিক বােমা বা ডিনামাইট বিস্ফোরণ, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের ফলে খনির ছাদে ধস নেমেও ভূমিকম্প হতে পারে

১০. ভূকম্পীয় তরঙ্গের শ্রেণিবিভাগ করে বৈশিষ্ট্য লেখাে।

উঃ ভূকম্পীয় তরঙ্গের শ্রেণিবিভাগ

ভূমিকম্পের ফলে উৎপন্ন তরঙ্গকে ভূকম্পীয় তরঙ্গ বলে। এই তরঙ্গ ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভুকম্পীয় তরঙ্গগুলি প্রধানত 3 প্রকারের হয়। যথা — (1) P তরঙ্গ বা প্রাথমিক তরঙ্গ, (2) S তরঙ্গ বা দ্বিতীয় পর্যায়ের বা গৌণ তরঙ্গ, (3) L তরঙ্গ বা পৃষ্ঠতরঙ্গ। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে দেওয়া হল —

1. P তরঙ্গ : P তরঙ্গের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—(1) P তরঙগ সর্বপ্রথমে সৃষ্টি হয়। (2) এই তরঙ্গের গতিবেগ সবথেকে বেশি (গড়ে 6 কিমি/সে) (3) এই তরঙগ কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় সকল মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। (4) এই তরঙ্গই সর্বপ্রথম উপকেন্দ্রে পৌছায়। 

2. S তরঙ্গ: S তরঙ্গের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—(1) P তরঙ্গ অপেক্ষা কিছুটা কম শক্তিশালী তরঙ্গ (গতিবেগ গড়ে 3-5 কিমি/সে)। (2) তরল বা গ্যাসীয় মাধ্যমের মধ্যে এই তরঙ্গ যেতে পারে না, কেবল কঠিন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। (3) এই তরঙ্গ বস্তূ কণার  ওপর নীচে ওঠানামার মাধ্যমে প্রবাহিত হয়।

3. L তরঙ্গ : L তরঙ্গের বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (1) সবথেকে কম গতিবেগসম্পন্ন (3-4 কিমি/সে) তরঙ্গ, কিন্তু  এই তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠে সর্বাধিক ক্ষতিসাধন করে। @ এই তরঙ্গ উপকেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠ বরাবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। 3) এই তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠ বরাবর লাভ তরঙ্গ ও র্যালে তরঙ্গ রূপে প্রবাহিত হয়।

১১. ভারতকে কয়টি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে ভাগ করা যায় ও কী কী ?

উঃ ভারতের ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ

ব্যুরাে অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (Bureau of Indian Standards) সংস্থাটি ভারতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ভূমিকম্পের তীব্রতা ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা দেখে ভারতকে পাঁচটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞলে ভাগ করেছে। এগুলি হল— 

1. অতীব ঝুকিপ্রবণ অঞ্চল : হিমাচল প্রদেশের মধ্যাংশ, জম্মু ও কাশ্মীরের কিছু অংশ, গুজরাতের কচ্ছের রান, সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত এবং সম্পূর্ণ আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এই অঞ্চলের অন্তর্গত।

2. যথেষ্ট ঝুকিপ্রবণ অঞ্চল : বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র উত্তরাংশ ও গুজরাটের কিছু অংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত।

3. মাঝারি ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চল : কেরল, গুজরাট, গােয়া, লাক্ষাদ্বীপ, উত্তরপ্রদেশ এবং পাঞ্জাব, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, অর্ধপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড় ও মহারাষ্ট্রের কিছু অংশ এর অন্তর্গত।

4. কম ঝুকিপ্রবণ অঞ্চল : মধ্যপ্রদেশ, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু প্রভৃতি রাজ্যের কিছু অংশ এই অঞলের অন্তর্গত।

5. অতি কম ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চল : মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, ওডিশা, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের কিছু অংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত।

১২. টীকা লেখাে: সুনামি

উঃ সুনামি একটি জাপানি শব্দ। সু’ (tsu) শব্দের অর্থ বন্দর এবং নামি’ (nami)-এর অর্থ ঢেউ। অর্থাৎ, সুনামির অর্থ হল বন্দরসংলগ্ন সামুদ্রিক ঢেউ।

সৃষ্টির কারণ— 

সমুদ্রের তলায় ভূমিকম্প ঘটলে সামুদ্রিক ভূত্বকের স্থান পরিবর্তন ঘটে সমুদ্রবক্ষের আকস্মিক ওঠা বা নামায় সামুদ্রিক ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়ে প্রবলশক্তিতে উপকূল অঞ্চলে আছড়ে পড়ে।

সুনামির বৈশিষ্ট্যগুলি হল— 

1. ঢেউ-এর উচ্চতা : সুনামির ফলে সৃষ্ট ঢেউ 30-40 মিটার উঁচু হয়ে সমুদ্রের উপকূলে আছড়ে পড়ে।

2. ঢেউ-এর গতিবেগ: এই ঢেউ ঘণ্টায় প্রায় 700 - 800 কিমি বেগে ধেয়ে আসে।

3. বিধ্বংসী ক্ষমতা: সুনামির স্থায়িত্ব এবং এর ফলে সৃষ্ট ঢেউ-এর উচ্চতা অধিক হওয়ায় এর বিধ্বংসী ক্ষমতা খুব বেশি হয়।

উদাহরণ

2004 সালের 26 ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরের তলদেশে বার্মা পাতের নীচে ভারতীয় পাত প্রবেশ করায় সুনামি বিধ্বংসী আকার ধারণ করেছিল। ভূমিকম্পের তীব্রতার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে 8.9। এই সুনামিতে প্রায় 300000 মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

১৩. ভূমিকম্পের ফলাফল সম্বন্ধে যা জান লেখাে।

উঃ  ভূমিকম্পের ফলাফল বা প্রভাবগুলি হল—

1. জীবন ও সম্পত্তিহানি: ভূমিকম্প ঘটার ফলে অনেকসময় বাড়িঘর চাপা পড়ে বা ভেঙে যায়। এর ফলে অনেক মানুষ ও গৃহপালিত জন্তুর মৃত্যু হয় এবং সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নষ্ট হয়।

2 . পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়া : ভূমিকম্পের ফলে রাস্তাঘাট, রেললাইন বেঁকে যাওয়া, বসে যাওয়া এবং ধসের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

3. জলাধার ভেঙে হঠাৎ বন্যার সম্ভাবনা : বড়াে জলাধারের বিপুল জলরাশির চাপে ভূমিকম্প হলে বাঁধ ভেঙে হঠাৎই বন্যা ঘটতে পারে। যেমন—মহারাষ্ট্রের কয়নাতে 1967 সালে এইভাবে ভূমিকম্প ও তার ফলে বন্যা হয়েছিল।

4. সুনামির সৃষ্টি: সমুদ্র তলদেশে সৃষ্ট ভূমিকম্প প্রবল সামুদ্রিক ঢেউ সৃষ্টি করে। ওই ঢেউ উপকূলভাগে আছড়ে পড়ে উপকূলবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক জীবন ও সম্পত্তি হানি ঘটায়। যেমন- -2004 সালে। ভারত মহাসাগরের তলদেশে (সুমাত্রার নিকট) সৃষ্ট ভূমিকম্পে যে সুনামি সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে 11 টি দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং প্রায় 3 লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হয়।

5. নতুন ভূভাগ সৃষ্টি : অনেকসময় আন্তঃসাগরীয় এলাকা ভেসে উঠে নতুন ভূভাগ তৈরি করে। যেমন—সম্প্রতি 2013 সালে করাচির নিকট এরূপ একটি কাদার দ্বীপ তৈরি হয়েছে। :

6. বন্দর গঠনে সহায়তা : ভূমিকম্পের ফলে উপকূলবর্তী ভূমিভাগ নিমজ্জিত হয়ে বন্দর গঠনের পক্ষে সাহায্য . অনেকসময় করে।



 









 

Post a Comment

0 Comments